আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ৩১ জুলাই ২০২৫ ● ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ৩১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের ক্রিকেটে যত বিতর্কিত ও কেলেঙ্কারির ঘটনা

সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, রাত ১০:৫৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদের বিরুদ্ধে বন্ধুদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সিফাতুর রহমান সৌরভ নামে তাসকিনের এক বন্ধু থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

তাসকিনের এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড়। জাতীয় দলের একজন নামি-দামি ক্রিকেট তারকার কাছ থেকে এমন কোনো কিছু সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। বন্ধুর সঙ্গে মারামারির এই ঘটনা নিয়ে যদিও তাসকিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, গুজব।

এছাড়া গত বছর (২০২৪) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের দিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় টিম বাস মিস করেছিলেন তাসকিন- বলে সংবাদ বের হয়। এ নিয়ে নানা মুখরোচক কথাও ছড়িয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যমে। তখনও তাসকিন এসব মুখরোচক সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিলেন।

তাসকিন এসব কিছু অস্বীকার করলেও মানুষের মধ্যে এখন আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নানা বিতর্কিত এবং কেলেঙ্কারির ঘটনা।

রুবেল হোসেনের নারী কেলেঙ্কারি

জাতীয় দলের সাবেক পেসার রুবেলের বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণে’র অভিযোগে নাজনীন আক্তার হ্যাপি নামে এক উঠতি মডেল তারকা। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর রুবেলের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তার কথিত সেই বান্ধবী। এ মামলায় ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি জেলে যেতে হয় রুবেলকে।

rubel hossain

পরে বিসিবির সহায়তায় তিনদিন হাজতে থাকার পর জামিন পান রুবেল। এরপর খেলতে যান অস্ট্রেলয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে এ ঘটনা বেশ প্রভাব ফেলেছিল দলে। অস্বস্তি আর গুমোট একটা ভাব বিরাজ করছিল দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে বিশ্বকাপে দারুণ সফল ছিলেন রুবেল। এরপর যদিও নাজনীন আক্তার হ্যপি তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেন। তবে এখনো নানা সময়ে ফিরে আসে রুবেলের সেই নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা।

আল আমিনের শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নারী কেলেঙ্কারি

জাতীয় দলের আরেক পেসার আল আমিন হোসেন ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালে বিতর্কে জড়ান। বিশ্বকাপের মাঝপথে জানলেন তিনি আর দলে নেই। ‘শৃঙ্খলাভঙ্গে’র অভিযোগে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

Al amin hossain

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনে নিয়ম ভেঙে আল আমিন টিম হোটেলে ফিরেছেন রাত ১০টার পর। এ ঘটনায় লম্বা সময় আল আমিনকে দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। পরে দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু থিতু হতে পারেননি।

২০১৬ বিপিএলে আবারও তার বিরুদ্ধে ওঠে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে আল আমিন হোটেলে নারী অতিথি নিয়ে যাওয়ায় প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা তাকে।

নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ এনে আল আমিন হোসেনের বিপক্ষে ২০২২ সালে মামলা করেন তার স্ত্রী ইসরাত জাহান।

শাহাদাত হোসেন রাজীবের শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন

জাতীয় দলের পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীবের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি নয়, শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে মামলা হলে স্ত্রীকে কিছুদিন পালিয়েও ছিলেন তিনি। অক্টোবরে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাওয়ার পর তিনি ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

Shahadat Hossain Rajib

মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। পরে সমঝোতা করে মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি।

শাহাদাত রাজীবের অপকর্ম এখানেই থেমে থাকেনি। ২০১৯ সালে জাতীয় লিগের ম্যাচ চলাকালে সতীর্থ খেলোয়াড় আরাফাত সানি জুনিয়রকে মারধর করায় পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। তবে নিষেধাজ্ঞার দেড় বছর পর ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে ক্রিকেটে ফিরতে বিসিবির কাছে আবেদন করেন শাহাদাত। যে কারণে তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

আরাফাত সানির একাধিক বিয়ের কেলেঙ্কারি

জাতীয় দল থেকে আবদুর রাজ্জাক বিদায় নেযার পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আরেকজন স্পিনসঙ্গী খোঁজার অনেক চেষ্টা করে বিসিবি। সে চেষ্টার অংশ হিসেবে দলে এসেছিলেন আরাফাত সানি। যদিও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তার বিরুদ্ধে। যার ফলে ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা খান এ বাঁ-হাতি স্পিনার।

Arafat Sunny

কিন্তু সব ছাপিয়ে যায়, ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে যখন তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন নাসরিন সুলতানা নামের এক তরুণী। মূলতঃ একজন স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় নাসরিন সুলতানা নামে আরেকজনকে বিয়ে করেছিলেন সানি।

অভিযোগে বলা হয়, ভুয়া একাউন্ট খুলে সানি তার (নাসরিন সুলতানার) আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সানিকে রিমান্ড শেষে জেলে যেতে হয়। প্রায় দুই মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরতে পারেননি তিনি।

মোহাম্মদ শহীদের স্ত্রী ও সন্তানকে নির্যাতন

২০১৭ সালের জুলাইয়ের এক দুপুরে হঠাৎ দুই সন্তানকে নিয়ে বিসিবি কার্যালয়ে হাজির হন জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শহীদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার। বিসিবির প্রধান নির্বাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন তিনি।

Mohammad Sahid

সেখানে ফারজানা আক্তার জানান, সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে কী আচরণ করছেন শহীদ। বিসিবির কাছে দেওয়া অভিযোগে তিনি লিখেন, ২০১১ সালে তাদের বিয়ের সময় শহীদদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তবে সংসার ছিল সুখের।

কিন্তু ২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর একাধিক নারী ভক্তের সঙ্গে শহীদের ঘনিষ্ঠতা হয়েছে বলে দাবি করেন ফারজানা। সে সময় ‘ঝামেলা’ মিটিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলেন শহীদ। পরের বছর সামাজিক মাধ্যমে নতুন বিয়ের ছবি প্রকাশ করেন তিনি।

সাব্বির রহমানের নারী কেলেঙ্কারি ও দর্শককে মারধর

জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাব্বির রহমান রুম্মনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। দর্শক ও সতীর্থকে মারধরের অভিযোগের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের মধ্যে নারীঘটিত ঘটনায় যার নাম বারবার উচ্চারিত হতো তিনি সাব্বির।

২০১৭ সালে জাতীয় লিগের ম্যাচ চলাকালে এক কিশোর দর্শককে মারধরের অভিযোগে ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬ মাস ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।

Sabbir rahman

তবে তার আগেই নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে বিপিএল চলাকালে হোটেল কক্ষে নারী অতিথি নিয়ে যাওয়ার অপরাধে তাকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

গুঞ্জন আছে ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে সাব্বির একাদশের বাইরে ছিলেন যতটা না পারফরম্যান্স, তার চেয়ে বেশি শৃঙ্খলাজনিত কারণে।

একই বছর (২০১৭ সালে) জুনে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে একাদশের বাইরে ছিলেন সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজকে মারধরের অভিযোগে। শৃঙ্খলাজনিত কারণে আরও অনেকবার তাকে দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল। এছাড়া আম্পায়ারকে গালি দেওয়া, নিজের গাড়ির চালককে পেটানোর মতো অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

নাসির হোসেনের নানা কেলেঙ্কারি

জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন বেশ আলোচিত-সমালোচিত। কোনো মামলা না হলেও তার নারীসঙ্গের বিষয় নিয়ে অনেক কথাই চালু ক্রিকেট-অঙ্গনে। নাসিরের মোবাইল সিম ও বান্ধবী সংখ্যা নিয়ে খোদ তখনকার বিসিবি সভাপতি মন্তব্য করেছিলেন।

Nasir Hossain

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই ধারাবাহিক ভালো করা নাসির পথ হারান মূলত এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। ক্যারিয়ারের যখন দুঃসময় চলছিল তখনই তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে গত জুনে হুমায়রা সুবাহ নামে নাসিরের এক মডেল বান্ধবী নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বোমা’ ফাটাতে শুরু করেন। যে ঘটনায় শুধু সতীর্থ খেলোয়াড়েরাই নয়, ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় পুরো বিসিবিও।

এরপর তিনি ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারে তামিমা সুলতানা তাম্মি নামে এক নারীকে বিয়ে করে আবারও আলোচনায় আসেন। অভিযোগ ওঠে অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন তিনি। বিমানের কেবিন ক্রু তামিমার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল; কিন্তু আগের স্বামীকে তালাক না দিয়েই তিনি নাসিরকে বিয়ে করেন। যে ঘটনায় আদালতে মামলাও হয়েছে।

২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি টি-টেন লিগে খেলতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে দেড় বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন নাসির হোসেন। আবুধাবিতে খেলতে গিয়ে আইফোন ‘উপহার’ পাওয়ার তথ্য গোপন করায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আইসিসি তাঁকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল।

মোসাদ্দেক হোসেনের বিয়ে নিয়ে কেলেঙ্কারি

বিতর্কিত ক্রিকেটারদের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নামও। ১৬ বছর বয়সে খালাতো বোন সামিয়া শারমিনকে বিয়ে করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন।

Mosaddek Hossain

মোসাদ্দেকের স্ত্রী সামিনা শারমীন এরপর ২৬ আগস্ট রোববার ময়মনসিংহের আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। নির্যাতনের বিভিন্ন সময়ে ছেলের পক্ষ নিয়ে মৌন থাকা ও ছেলেকে সহযোগিতা করায় মোসাদ্দেকের মা পারুল বেগমকেও আসামি করেছেন সামিনা।

স্ত্রীর পরিবারের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর মোসাদ্দেকের নাকি মাথা ঘুরে গেছে! এ নিয়ে বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি সতর্ক করে সৈকতকে। পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে উম্মে তামান্না নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন মোসাদ্দেক।

সাকিব আল হাসানের নানা বিতর্ক

বিতর্ক আর সাকিব আল হাসান যেন একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার হলেও সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ঘটনা অনেক। এ নিয়ে অনেক কিছু লিখে দেয়া যাবে।

Shakib al hasan

তবে, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের সময় টিভি ক্যামেরার সামনে অশালীন ভঙ্গিতে বাজে ইঙ্গিত করার ঘটনাটি বেশ আলোচিত। যে ঘটনায় তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সাকিবকে।

এরপর স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দর্শককে পিটিয়ে আহত করা, আম্পায়ারদের সঙ্গে অসদাচরণ, স্ট্যাম্পে লাথি মারা, নানা সময় দর্শককে মারধর করার বিতর্কিত ঘটনা রয়েছে সাকিবের। এছাড়া অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল খেলতে যাওয়ার মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে আনায় টেস্ট ও ওয়ানডে দল থেকে অবসর নেওয়ার হুমকি দিয়ে ছয় মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব।

শুধু তাই নয়, জুয়াড়ির কাছ থেকে ফিক্সিং প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটি গোপন করায় আইসিসি কর্তৃক এক বছর নিষিদ্ধও হন তিনি।

Mohammad Ashraful

মোহাম্মদ আশরাফুলের ফিক্সিং

বিপিএলে ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা ২০১৩ সালে স্বীকার করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এজন্য তাকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি।

মন্তব্য করুন


Link copied