আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ৭ আগস্ট ২০২৫ ● ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ৭ আগস্ট ২০২৫

শেখ হাসিনা এখন কোথায়?

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, রাত ১১:০৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে দেশের মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আছেন এটা নিশ্চিত হলেও ভারতের কোথায় আছেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য জানা যাচ্ছে না।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন হয় টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও। জনরোষের ভয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন ৷ এখনো সেদেশেই তিনি অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে৷ শেখ হাসিনা ভারতে আছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ শেখ হাসিনা ভারতে আছেন- এটা ভারত সরকার কখনো অস্বীকার করেনি। আবার ভারত থেকে তিনি অন্য কোনো দেশে গিয়েছেন এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

 

ভারতীয়সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৭ অক্টোবর দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান নিয়ে জানেন...তাকে এখানে খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে চলে আসতে হয়েছিল প্রধানত সুরক্ষার কারণে। তিনি এখনো সেভাবেই আছেন। ’

এর আগে শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মধ্যপ্রাচ্যের বা ইউরোপের কোনো কোন দেশে চলে যাওয়ার বিভিন্ন গুঞ্জন বিভিন্ন সময় ওঠে।  

ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ডা. জন বৃত্তাস ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে কি না। যদি চেয়ে থাকে, তাহলে কী কারণে তাকে ফেরত চেয়েছে এবং ভারত সরকারের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে কীর্তি বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের জবাব দেয়নি ভারত। রণধীর জয়সোয়াল ও কীর্তি বর্ধন সিংয়ের এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে এটুকু নিশ্চিত শেখ হাসিনা এখনো ভারতেই।

তবে তিনি ভারতের কোথায় আছেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেন না ৷ তার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় ভরতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে একাধিক স্থানের নাম শোনা গেলেও কোনোটাই সুনির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করা হয়নি ৷ এ বিষয়ে ভারত সরকার অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে ৷ 

অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশে আছেন হাসিনা, আবার অনেকে বলছেন দিল্লিতে। কেউ কেউ বলছেন, ভারত সরকারের রুটিন অনুযায়ী মাস অন্তর ভারতের মধ্যে একাধিক স্থান পরিবর্তন করেছেন হাসিনা। আবার অনেকেই বলছেন, তাকে সম্প্রতি রাজস্থানে রাখা হয়েছে।

কারও কারও মতে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করছেন। কারণ একাধিক মাধ্যম বলছে, আওয়ামী লীগের পলাতক অনেক মন্ত্রী-নেতা কলকাতার সল্টলেক এবং নিউ টাউন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। ফলে তিনি ওই দুই অঞ্চলের মধ্যে অস্থায়ী অবস্থান করছেন। মনে করা হয়, দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নানা ছক কষতে কলকাতায় একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন হাসিনা। তবে এ নিয়ে নিশ্চিত কেউ বলতে পারছে না।

গত বছর ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। সেখানে কিছুদিন ছিলেন। পরে তাকে দিল্লি নিয়ে আসার কথা শোনা যায়।

গত বছরের ২৪ অক্টোব ভারতের গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিলো, শেখ হাসিনা দিল্লিতে আছেন। তিনি নয়াদিল্লির লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে একটি সুরক্ষিত বাড়িতে রয়েছেন। ভারত সরকারই তার থাকার জন্য বাড়িটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার মর্যাদা অনুসারে তাকে থাকার জন্য বেশ বড়সড় বাংলো দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের বাংলো ভারতের মন্ত্রী, পার্লামেন্ট সদস্য ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে শেখ হাসিনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ওই বাংলোর ঠিকানা বা সড়ক নম্বর প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়নি বলে দ্য প্রিন্ট প্রতিবেদনে জানিয়েছিলো।

শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে এসব তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাদা পোশাকে ২৪ ঘণ্টা তার চারপাশে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন। নিরাপত্তার খাতিরে যথার্থ প্রটোকল সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে বের হন বলেও জানানো হয়।

কয়েকটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা দেখা করেন। এরপর দুদিনের মধ্যে তিনি বিমানঘাঁটিটি ছেড়ে যান।

দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র জানায়, ওই বিমানঘাঁটিতে তিনি লম্বা সময় থাকতে পারতেন না। কারণ, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। তাই কয়েক দিনের মধ্যে তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দিল্লির নিরাপদ ও সুরক্ষিত লুটেনস এলাকায় তার জন্য একটি বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এই এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অনেক সাবেক ও বর্তমান পার্লামেন্ট সদস্যের বাড়ি রয়েছে।

শেখ হাসিনা বাড়ির বাইরে চলাফেরা করেন কি না, জানতে চাইলে সূত্র জানায়, ‘কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে মূল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দলকে জানানো হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ’

দ্য প্রিন্টের দেওয়া এই তথ্যের পর শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে আর নতুন কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে ভারতে যাওয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলছেন ও যোগাযোগ রাখছেন ৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফোনকলের অডিও রেকর্ড প্রকাশ ও ভাইরাল হয়েছে ৷ 

যদিও তিনি কেন ভিডিওতে দেখা দিচ্ছেন না বা প্রকাশ্যে আসছেন না, তা নিয়েও নানা আলোচনা-কৌতূহল আছে। দলটির নেতাদের তথ্য মতে, ভিডিওগ্রাফি অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থান স্পষ্ট করে ফেলতে পারে। যে কারণেই হাসিনার কঠোর নির্দেশ, কখনোই ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না।

শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়সহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন। তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের অনেকেই দেশের বাইরে। নিকটাত্মীয় বা দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন কি না আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারছে না।

তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গত ৬ জুন দিল্লিতে মায়ের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন এবং একসঙ্গে ঈদ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে কোথায় তাদের দেখা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এও জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবর অথবা নভেম্বরের দিকে জয় কলকাতায় আসতে পারেন। সেখানে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করতে পারেন।

ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো বলছে, বিমানবন্দর থেকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়েই তাকে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয় শেখ হাসিনা যে গোপন ঠিকানায় আছেন সেখানে। ওই ঠিকানায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ছিলেন। তবে ডব্লিউএইচও এর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক সায়মা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়েছে। গত ১১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে এই ছুটি।  

এর চার মাস আগে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁ বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করে। দিল্লিতে অবস্থানরত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার মা শেখ হাসিনার সঙ্গে গত এক বছরে দেখা করতে পেরেছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

মন্তব্য করুন


Link copied