আর্কাইভ  বুধবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৫ ● ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৫

বিশ্ব বিড়াল দিবস: আপনার ছোট্ট সদস্যের যত্ন নিচ্ছেন তো?

শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, রাত ১০:০৮

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: বিশ্বে বর্তমানে পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিড়াল। নানা ভঙ্গিমায় আদর-আহ্লাদ আর খেলাধুলায় মায়ার বাঁধনে জড়ায় এই ছোট প্রাণীটি। আজ এই আদুরে প্রাণীটির জন্য বিশেষ দিন। প্রতি বছর ৮ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব বিড়াল দিবস। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার (IFAW) সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে এ দিবসটি।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে- বয়স্ক মানুষ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ প্রায় সবার আগ্রহ রয়েছে বিড়াল পালনের প্রতি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিড়াল পোষার নানারকম উপকারিতা আছে। যারা বিড়াল পোষেন তাদের স্ট্রেস কম থাকে, মন আনন্দে থাকে।

আমাদের দেশের পেট শপগুলোতেও মেলে নানান প্রজাতির বিড়াল—যেমন দেশি, পার্সিয়ান, মিক্সড ব্রিড, বেঙ্গল, সাইবেরিয়ান ইত্যাদি। এর মধ্যে দাম ও সহজলভ্যতার কারণে দেশি ও পার্সিয়ান প্রজাতিই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পোষা প্রাণীর দোকানগুলোতে তাই বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ, এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ভিড় লেগেই থাকে।

বিড়ালকে বিশেষ গুরুত্ব দিন

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার সম্প্রতি ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, যেভাবে মানুষের বার্ধক্যে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়, তেমনি পোষ্যদের কিংবা বিড়ালের বয়স বাড়ার সঙ্গে নানা অসুখ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ে। তাই বিড়ালের বয়স বাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া জরুরি। যেমন-

আচরণে নজর: হঠাৎ খাওয়া কমে যাওয়া, কম হাঁটাচলা করা বা বেশি ঘুমানোর মতো লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত। এসব হতে পারে আর্থ্রাইটিস, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের সংকেত।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বাহ্যিক কোনো লক্ষণ না থাকলেও অসুখ লুকিয়ে থাকতে পারে, তাই সময়ে সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।

পুষ্টিকর খাবার: পোষ্যের ওজন ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ প্রোটিন এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করে খাবার দেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

সুবিধাজনক ব্যবস্থা: অসুস্থ বিড়ালের জন্য মল-মূত্রের পাত্র ও চলাচলের সহজ ব্যবস্থা রাখতে হবে, কারণ বিড়াল পরিচ্ছন্ন প্রাণী এবং নোংরা স্থান পছন্দ করে না।

এছাড়াও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সের শিক্ষার্থী ও পশুপ্রেমী ফাতিমা ফেরদৌস জানান, বিড়ালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফ্লু রোগ। তার পরামর্শ, বিড়ালের ফ্লু টিকা শুরু করতে হবে আড়াই মাস বয়স থেকে এবং তিন মাস বয়স থেকে র‍্যাবিস এর টিকা দেওয়া যেতে পারে। ফ্লু এর টিকা দিলে তার একমাস পর বুস্টার ডোজ দিতে হয় বলেও জানান তিনি। বিড়ালের মানসিক দিকটাও বিবেচনায় রাখার পরামর্শ তার; যেমন- পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা যায়।

বলা বাহুল্য, আগের তুলনায় এখন বিড়াল পালনও বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পোষা বিড়ালের সংখ্যা প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিড়াল পালনের হার বেড়েছে প্রায় ৪০%। তবে বাংলাদেশের চিত্র ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে সময় অনেকেই ভুল ধারণা থেকে 'বিড়াল ভাইরাস ছড়াতে পারে' মনে করে তাদের বাসা থেকে সরিয়ে দেন বা ফেলে দেন।

তবে বিড়াল পালনে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভেটেরিনারি সাইট থেকে জানা যায়, বিড়াল কিছু ভাইরাস বহন করতে পারে বটে, তবে সব ভাইরাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে র‍্যাবিস ভাইরাস (যদিও বিরল) বিড়ালের মাধ্যমে ছড়াতে পারে যদি তারা আক্রান্ত হয়। আর র‍্যাবিসে আক্রান্ত বিড়াল কিংবা যেকোনো পশুর সংস্পর্শে মানুষের মাঝে জলাতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।

কিন্তু এর সমাধানও রয়েছে। তাই অযথা আতঙ্কিত হয়ে বিড়াল পরিত্যাগের কোনো কারণ নেই; বরং নিয়মিত টিকা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে বিড়াল এবং মালিক দু’জনেরই সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

র‍্যাবিস কিংবা জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করণীয়

  • বিড়ালের নিয়মিত টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
  • বিড়ালের আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • কামড় বা আঁচড় খেলে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা ও র‍্যাবিস ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।
  • অবাধে বন্য প্রাণীর সঙ্গে বিড়ালের মিশতে দেওয়া যাবে না।

মন্তব্য করুন


Link copied