নিউজ ডেস্ক: ভূমজাইথাই পার্টির নেতা অনুতিন চার্নভিরাকুলকে শুক্রবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট। তিনি দেশটিতে বেশ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে তিনি একজন 'সতর্ক এবং বাস্তববাদী' রাজনীতিবিদ, যিনি দেশের রাজনৈতিক বিভাজন দূর করতে পারদর্শী।
থাইল্যান্ডে গাঁজাকে 'অপরাধমুক্ত' করার অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত। ৫৮ বছর বয়সী এই নেতার ভুমজাইথাই পার্টি বিশাল গ্রামীণ জনসংখ্যার সমর্থন পেয়েছে।
অনুতিন ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান পর্যন্ত থাকসিনের সরকারে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৯ সালে নিজের ভূমজাইথাই দলের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি থাকসিনের চিরশত্রু প্রাক্তন সেনা কমান্ডার প্রায়ুথ চান-ওচার সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০২৩ সালে থাকসিন-সমর্থিত ফেউ থাই পার্টির নেতৃত্বে একটি জোট সরকারে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন।
চলতি বছরের জুনে সেই সর্বশেষ জোট ভেঙে যায়, যখন থাকসিনের কন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পায়েংটার্ন সিনাওয়াত্রা এবং কম্বোডিয়ার প্রেসিডেন্ট হুন সেনের একটি বিতর্কিত ফোনালাপ ভাইরাল হয়। এরপর মূলত সিনাওয়াত্রার জনসমর্থনের সঙ্গে রাজনৈতিক সমর্থনও কমতে থাকে।
পূর্বসূরীর এই ভুল ছিল অনুতিনের ক্ষমতায় আসার জন্য 'শর্টকাট' পথ। ফোনালাপ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে অনুতিন মন্ত্রিসভা পদ ছেড়ে দেন এবং তার দলকে জোট সরকার থেকে সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে সাংবিধানিক আদালত প্রথমে নীতি লঙ্ঘনের জন্য সিনাওয়াত্রার প্রধানমন্ত্রী পদ স্থগিত করে এবং পরে তাকে বরখাস্ত করে।
থাই গবেষক নাপোন জাতুস্রিপিতাক এবং সুথিকর্ন মিচান গত বছর অনলাইনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলেছিলেন, অনুতিনের ভূমজাইথাই দল 'ক্ষমতার সর্বশ্রেষ্ঠ দালাল' হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তারা লিখেছেন, 'এটি আদর্শিক প্রতিশ্রুতির অভাব।'
১৯৬৬ সালে ব্যাংককে জন্মগ্রহণকারী অনুতিন রাজনীতিবিদ এবং নির্মাণ ব্যবসায়ী চাভারাত চার্নভিরাকুলের ছেলে।
নিউইয়র্কের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করার পর তিনি পরিবারের কোম্পানি 'সিনো-থাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন পিসিএল'-এ যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। সংস্থাটি ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরসহ বড় বড় প্রকল্পগুলোতে যুক্ত ছিল।
১৯৯৬ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। এরপর তিনি থাকসিনের থাই রাক থাই পার্টির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন, যখন ২০০১ সালে দলটি ক্ষমতা গ্রহণ করে। অনুতিন তখন উপমন্ত্রীর পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থাকসিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে তার পদও আটকে যায়। দলের অন্যান্য সিনিয়র সদস্যদের মতো তাকেও রাজনৈতিক কার্যকলাপে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি পারিবারিক ব্যবসায় ফিরে আসেন।
২০১২ সালে যখন রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়, তখন অনুতিন ভূমজাইথাই দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দলটি দেশটির উত্তর-পূর্বে একটি প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
২০১৯ সালের নির্বাচনে ভূমজাইথাই পার্টি পঞ্চম স্থানে থাকার পর তিনি ক্ষমতাসীনদের জোটে যোগ দেন। তাকে এই সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল ২০২২ সালে গাঁজার 'অপরাধমুক্তি'। তিনি গাঁজা নিয়ে বার্ষিক বিলিয়ন বিলিয়ন রাজস্বের পরিকল্পনা এবং কারাগারের জনসংখ্যা হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করেন। তিনি বিনামূল্যে ১০ লাখ গাঁজা গাছ বিতরণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছিলেন।
তবে গাঁজা 'অপরাধমুক্ত' করায় বেশ সমালোচনাও হয়। ব্যাপক নিয়মকানুন অমান্য এবং অনিয়ন্ত্রিত গাঁজা সেবনের বিস্তার ঘটে। শিশুদের এতে প্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবুও এটি চলছে এবং চলটি বছর এই শিল্পকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আনুতিন থাইল্যান্ডের কোভিড-১৯ মোকাবেলার তত্ত্বাবধানও করেছিলেন। যদিও থাইল্যান্ডে বেশিরভাগ দেশের তুলনায় খারাপ কিছু ঘটেনি, তবুও সংকট মোকাবেলার জন্য তিনি তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বিশেষ করে টিকা সরবরাহে বিলম্বের কারণে।
সম্প্রতি অন্যান্য সম্ভাব্য কেলেঙ্কারি তাকে আরও বেশি প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, গত বছরের সিনেট নির্বাচনে কিছু প্রার্থীকে 'অন্যায্য সুবিধা' দেওয়ার জন্য সন্দেহজনক যোগসাজশ।