মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।। জুলাই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেলেও যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আরেকটা যুদ্ধ বাকি আছে, ইসলাম কায়েম করার যুদ্ধ। বদর, উহুদ, খন্দকে সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে জীবন দিয়ে কোরআনের আইন চালু করেছেন, সেই সাহাবীদের অনুসরণে আপনাদের আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে। হাত উচিয়ে আল্লাহকে দেখান, বাংলাদেশের মাটিতে কোরআনের আইনের জন্য আমরা যুদ্ধ করব ইনশাআল্লাহ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের সহ পাঁচ দফা দাবি বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ্ ময়দানে অনুষ্ঠিত আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
৮ দলের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদেরকে রাজনীতি করতে হবে। সমস্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু হবে মানুষের কল্যাণ করা। ব্যক্তি কল্যাণ, স্বার্থপরতা, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ_এই সমস্ত খারাপ কাজ করলে আখিরাতে কোনো কল্যাণ পাওয়া যাবে না। ৫৪ বছর ধরে কয়েকটা সরকার এসেছে, কোনো সরকারই মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে নাই। হয় ব্যক্তির জন্য, না হয় দলের জন্য কল্যাণ করেছে। আর না হয় দুনিয়ায় কিছু মানুষের উপকার করার জন্য কাজ করেছে। তারা আখিরাতের কল্যাণের জন্য কাজ করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আট দল ঘোষণা দিচ্ছি_আমরা দুনিয়ারও কল্যাণ করতে চাই। আখিরাতেও আমরা কল্যাণ করতে চাই। আখিরাতের কল্যাণের জন্য আবু সাঈদ-মুগ্ধদের মতো জীবন বিলিয়ে দিতে হবে। আমরা আল্লাহর আইন চালু করতে জীবন দিতে রাজি আছি।
কোরআনের একটি সূরার আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য চারটি কাজের কথাও বলেছেন। নামাজ কায়েম করে মানুষের চরিত্রকে ভালো করে দিতে হবে। যাকাত চালু করে মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্রতা দূর করে দিতে হবে। ভালো কাজ চালু করে মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খারাপ কাজ বন্ধ করে মানুষকে অশান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে_এই চার দফা কাজ এবং কোরআনের আইন চালু করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, আবু সাঈদের যুদ্ধের টার্গেট ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’_আমরা সুবিচার চাই। ইসলাম কায়েম ছাড়া দেশে সুবিচার নিশ্চিত হতে পারে না। জাস্টিস হতে হলে ইসলামা কায়েম করতে হবে, দ্বীন কায়েম করতে হবে। দুনিয়ার যত দেশ আছে, কোনো দেশে জাস্টিস নাই। বাংলাদেশে জাস্টিস তো হয়নি, জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন করা হয়েছে।
পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলেছি, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার হওয়া দরকার। সংস্কার করতে হবে খারাপ যা কিছু আছে বাদ দিতে হবে_ভালো যা কিছু আছে তা গ্রহণ করতে হবে। অতীতে চোর-ডাকাতদের মতো ভোটের বাক্সগুলো চুরি-ডাকাতি হয়েছে। ২০১৪ তে বিনাভোটে নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। আর ২০২৪ এ কেউ ভোট দিতেও যায়নি, কেউ ভোটে দাঁড়াতেও (প্রতিদ্বন্দ্বিতা) চায়নি। সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেছিল, ভোটকেন্দ্রে মানুষ নেই কুত্তা (কুকুর) কয়েকটা শুয়ে আছে। কুত্তা শুয়ে থাকার নির্বাচন আমরা আর বাংলাদেশে চলতে দিতে চাই না। গণভোটের মাধ্যমে ভোটের চরিত্র পাল্টাতে হবে।
মুজিবুর রহমান বলেন, গণভোট মানে জনগণ ভোট দিবে। রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারছে না বলেই গণভোট হচ্ছে। এই গণভোট হওয়াটা জাতির জন্য ভালো লক্ষণ আর না হওয়াটা খারাপ লক্ষণ। যারা গণভোট হতে দিতে চায়, তারা জনগণের জন্য ভালো কিছু করতে চায়। আর যারা গণভোট হতে দিতে চায় না অথবা গণভোটের রেজাল্ট যাতে না আসে সেজন্য তারা নির্বাচনের দিকে গণভোট চায়। এখন গণভোট আগে হোক আর পরে হোক আমরা গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হয়েছে, এটা প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্। যারা গণভোট চায় না তাদের পরাজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, যারা চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী আগামীতে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের জায়গা হবে না। যারা শরিয়তের আইন বিশ্বাস করে না, তাদেরকে ভোট দেয়া উচিত না। আমি জানি না জনগণ এবার কি রায় দেবে? তবে আমরা বলেছি অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে করতে সাহায্য করে_ দুজনই সমান অপরাধী। একটাকে যদি (আওয়ামী লীগ) তার কাজকাম নিষিদ্ধ করা হয়, যারা সহযোগি তাদেরও নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলবো সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন আশা করছি।
রংপুর বিভাগীয় এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ৮ দলের নেতা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- বজামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ ৮ দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।।