নিউজ ডেস্ক: টানা পাঁচ দিনের পূজা-অর্চনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বির্সজন দেওয়া হয়।
এসময় সেখানে ছিল বিষাদের সুর। সদরঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অপেক্ষা করে বিকেল থেকেই ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টার বাজনার তালে তালে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও মহল্লা থেকে শোভাযাত্রা করে প্রতিমাগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আনা হয়। পরে নৌকাযোগে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় নদীর মাঝখানে, সেখানে সম্পন্ন করা হয় বিসর্জন।
এসময় ভক্তদের কারও চোখে দেখা যায় অশ্রু, কারও ঠোঁটে শোনা যায় দেবীর বন্দনা। কেউবা নদীর পানি ছিটিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ও পরিবারের সদস্যের শরীরে।
পুরান ঢাকার লক্ষীবাজার থেকে আগত নবনীতা বর্মণ জানান, এই কয়েকটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে। মা দুর্গা আমাদের মাঝে ছিলেন, তাই আনন্দে ভরে উঠেছিল চারপাশ। কিন্তু আজ মা চলে যাচ্ছেন, সেই কষ্টে বুকটা ভরে উঠছে। আবারও এক বছরের অপেক্ষা। এবারের পূজায় আমি বিশেষ প্রার্থনা করেছি যেন আমাদের দেশ শান্তিময় হয়, সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নেমে আসে।
ধানমন্ডি থানার পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মাকে বিদায় জানাতে এসেছি। মা আমাদের ধরাধামে এসেছিলেন আমাদের মঙ্গলের জন্য, অসুর বধ করার জন্য। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, যাতে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। আগামীতে দেশ যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সব মানুষের মঙ্গল হয়, এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা ছিল।
দশমীর সকালে মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজার অন্যতম প্রধান আচারে অংশ নেন নারীরা। দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করে তারা দেবীর শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে অপরের গায়ে সিঁদুর মেখে জীবনের সমৃদ্ধি কামনা করেন।
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানীতে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন জানান, শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় দুই হাজার ৪০০ অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি পলাশীর মোড়, রায় সাহেব বাজার ও ওয়াইজ ঘাট এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে তিনটি অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার। প্রতিটি প্রতিমাকে পুলিশি পাহারায় নদীর ঘাটে আনা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম ও বিশেষ ইউনিট রয়েছে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত। নদীপথে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌ পুলিশ, নৌ ডুবুরি দল, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস টিমও রয়েছে সতর্ক টহলে। এছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম।
সনাতন ধর্মাবলীরদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে দেবী দুর্গা স্বামীর বাড়ি কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে পিতৃগৃহে আগমন করেন। পক্ষকাল পর তিনি ফিরে যান স্বামীগৃহে। এ পাঁচদিন ভক্তরা দেবীর বন্দনা, পূজা ও উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানালেও অন্তরে থেকে যায় আগামী বছরে তার পুনরাগমনের প্রত্যাশা।