লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাংলাদেশ রেলওয়ের ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন ও পদ-পদবীর বৈষম্য দূর করে বৈষম্যহীন ৯ম পে-স্কেল ঘোষণা এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে সরকারের কাছে আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী ঐক্য জোট।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরের দিকে লালমনিরহাটে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের পর ঐক্য জোটের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে-কমিশনের রিপোর্ট পেশ এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে রেল কর্মচারীদের বর্তমান বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী ঐক্য জোটের নেতারা বলেন, ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেলের প্রায় ১০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকায় একজন কর্মচারীর পক্ষে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা সহকারে জীবনধারণ করা অসম্ভব।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ১০টি গ্রেডের বেতনের মোট পার্থক্য মাত্র ৪ হাজার টাকা (৮২৫০ টাকা থেকে ১২৫০০ টাকা)। অথচ একই সময়ে প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ১০টি গ্রেডের বেতনের মোট পার্থক্য ৬২ হাজার টাকা (১৬ হাজার টাকা থেকে ৭৮ হাজার টাকা।
বর্তমানে প্রথম গ্রেড ও ২০তম গ্রেডের বেতনের অনুপাত ১:১০, যা চরম বৈষম্যমূলক। ঐক্য জোট এই অনুপাত ১:৪ এ নামিয়ে এনে মোট ১২টি গ্রেডের ভিত্তিতে ৯ম পে-স্কেল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
কুক-দারোয়ানসহ নানাবিধ সুবিধা এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলেও ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা এসব সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ী, আবাসিক সুবিধা, সুদমুক্ত গাড়ীর ঋণ দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচারীরা বর্তমান ভাতাসমূহের ব্যাপক বৃদ্ধির দাবি জানান।
পদ-পদবী বৈষম্য ও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে ঐক্য জোটের নেতারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও সচিবালয়ের বাহিরের দপ্তর ও অধিদপ্তরের কর্মচারীদের জন্য কমন ক্যাটাগরির পদনাম বা গ্রেডের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, অথচ সচিবালয়সহ হাইকোর্ট ও ডিসি অফিসের কর্মচারীদের পদনাম ও গ্রেড পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদ-পদবী পরিবর্তনসহ কমন ক্যাটাগরির এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিও জানানো হয়।
ঐক্য জোটের আহ্বায়ক মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের ন্যায্য অধিকার এবং সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ করা না হলে, আমরা রেলসহ সকল সরকারি দপ্তরে কঠোর ও লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে আমরা বাধ্য হবো।
বক্তব্য শেষে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরেস্মারকলিপি প্রদান করেন, সংগঠনের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ সাইদুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ শামসউদ্দিন খন্দকার প্রমুখ।
এর আগে রেল ভবন থেকে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেন।