মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৮০) ও তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬৫)কে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় অবশেষে এজাহার দায়ের হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর চাকলা রায় বাড়িতে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
রবিবার দুপুরে নিহত দম্পতির বড় ছেলে শুভেন রায় (৪০) তারাগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেন। তিনি জানান, ৬ ডিসেম্বর রাত ৯টা ২২ মিনিটে বাবা-মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন। পরদিন সকালে ভাগিনা দীপক রায়ের মাধ্যমে হত্যার খবর জানতে পারেন।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, রাতে যেকোনো সময় দুর্বৃত্তরা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে কোপাতে তার বাবা-মাকে হত্যা করে। ডাইনিং রুমে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ এবং রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় দুটো মরদেহেরই মাথার খুলি ক্ষতবিক্ষত হয়ে মগজ বের হয়ে ছিল।
সকালে বাড়িতে কাজ করতে আসা দীপক চন্দ্র রায় ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হলে মই বেয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে যোগেশ রায়ের এবং পরে রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের মরদেহ দেখতে পান। পরে তিনি প্রতিবেশীদের খবর দেন। খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুশান্ত চন্দ্র রায়সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তারাগঞ্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আবু সাঈম বলেন,গলাকেটে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। জড়িতদের শনাক্তে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।”
নিহত দম্পতির দুই ছেলে শুভেন রায় কর্মরত আছেন জঅই–৫ এর জয়পুরহাট সিপিসি–৩ ক্যাম্পে এবং ছোট ছেলে রাজেশ খান্না রায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। তারা দুজনেই পরিবারসহ কর্মস্থলে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে একা থাকতেন তাদের পিতা-মাতা। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। এই দম্পতির নির্মম মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এজাহার দাখিলের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে এখনো হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৎকার করা হয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে পাঁচটায় তারাগঞ্জের পূর্ব রহিমাপুর হিন্দু পল্লীর চাকলা শ্মশানে তাদের সৎকার সম্পন্ন হয়।
এর আগে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনাব্বর হোসেন ও ওসি রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে যোগেশচন্দ্র রায়ের মরদেহে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়।