মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুর নগরীতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃক জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবি জানিয়েছে রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে গ্রাহক শোষণের নতুন পন্থা হিসেবে প্রিপেইড মিটার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে বক্তারা বলেন, এই পদ্ধতি গ্রাহকদের হয়রানি, অতিরিক্ত ব্যয় এবং আইনি জটিলতার মধ্যেই ফেলবে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোজাহার আলী। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও অফিসে নেসকো কর্তৃপক্ষ জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু করেছে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া বা গণশুনানি আয়োজন করা প্রয়োজন ছিল।
বক্তারা বলেন, প্রিপেইড মিটার একটি শোষণমূলক পদ্ধতি। গ্রাহকদের আগাম অর্থ পরিশোধ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। ব্যালেন্স শেষ হলেই পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে—যা বিদ্যুৎ আইন ২০০৩-এর ৫৬ ধারার পরিপন্থি। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন চলমান থাকলেও নেসকো তড়িঘড়ি করে সংযোগ দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল একটি বিশেষ চক্রের হাতে। এখনো নেসকোসহ বিদ্যুৎ বিতরণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেই চক্রকে সুবিধা দিতে বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মিটার আমদানির পরিকল্পনা করছে।
তারা বলেন, গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের নামে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
বক্তারা জানান, প্রিপেইড মিটারে— প্রতি ১ হাজার টাকা রিচার্জে ২০ টাকা এজেন্ট কমিশন দিতে হবে, প্রতি মাসে ৪০ টাকা মিটার ভাড়া পরিশোধ করতে হবে, মিটার লক খোলা বাবদ ৬০০ টাকা দিতে হবে, ব্যালেন্স শেষ হলে ২০০ টাকার ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সে ৫০ টাকা সুদ দিতে হবে, ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ না থাকলে রিচার্জ করা যাবে না, সার্ভার ডাউন হলে অজস্র গ্রাহক অন্ধকারে থাকতে বাধ্য হবে।
বক্তারা বলেন, কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচপাম্পের ক্ষেত্রে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পরে ফসল বিক্রি করে বিল পরিশোধ করতেন। প্রিপেইড পদ্ধতিতে সেই সুযোগ থাকবে না—ফলে কৃষকদের বড় ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রিপেইড মিটার স্থাপন হলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজারো কর্মচারীর চাকরি হারানোর আশঙ্কাও তুলে ধরেন তারা।
বক্তারা বলেন, বিগত সরকার বারবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বার্থ উপেক্ষা করেছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। উৎপাদন না করেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো ১০ বছরে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা পেয়েছে—যার বোঝা বহন করেছে সাধারণ মানুষ।
জনস্বার্থ উপেক্ষা করে হয়রানীমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ডিমান্ড চার্জ, সার্ভিস চার্জ ও মিটার ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গণশুনানি বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের অনিয়ম–দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ঘুষ–দুর্নীতি দূর করে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রকৃত সেবামূলক সংস্থায় রূপান্তর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সাধারণ গ্রাহকরা উপস্থিত ছিলেন।