মমিনুল ইসলাম রিপন: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ঘোষিত এ তলিকায় রংপুর-১ এ জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-মামুন ও রংপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এনপিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রথম ধাপে ১২৫ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এবারের নির্বাচনে দলটি ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। পরবর্তী ধাপে রংপুরের বাকি চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির নেতারা।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও জনসম্পৃক্ত নেতৃত্বকে সামনে আনা হচ্ছে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় দফায় আরও আসনের মনোনয়ন খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। মাঠপর্যায়ে জরিপ, জনপ্রিয়তা, দলীয় তৎপরতা ও জনস্বার্থে কাজের ইতিহাস বিবেচনা করে বাকি আসনগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
প্রার্থী ও আসন পরিচিতি:
গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসন। এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ সাল থেকে এ আসনে একক আধিপত্যের দাপটে দুর্গ গড়ে তুললেও সবশেষ ২০২৪ এর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু। এবার এই আসনে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আল মামুনকে মনোনয়ন দিয়েছে এনসিপি।
আল মামুন বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক। চলতি মাসের ২ ডিসেম্বর আল মামুনকে আহ্বায়ক ও এরশাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করে রংপুর জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
আল মামুনের বাড়ি রংপুরে হওয়ায় তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের পরপর দুইবার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জুলাই পরবর্তিতে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব থেকে সরে আসেন।
চব্বিশেরর ছাত্র আন্দোলনে মাইক হাতে আল মামুনের কন্ঠে ‘আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না’ স্লোগানে মুখরিত ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। তার এই সাহসী ভূমিকার মূল্যায়ন হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রংপুরের আহ্বায়কের দায়িত্ব অর্পনের পর এবার তাকে সংসদ সদস্যপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সংগঠকরা।
এদিকে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার এবং বিএনপি ১ বার জয় পেয়েছিল।
এবার এ আসনে লড়বেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হলেও এরআগে এ বছরের ১ জুলাই রংপুরে জুলাই পদযাত্রা থেকে আখতার হোসেনকে রংপুর-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আখতার হোসেন কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ২০১৮ সালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে আখতার হোসেন একক অনশন ধর্মঘট করেন, যা তাকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করে তোলে।
এর আগে, আখতার হোসেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি এবং সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পুলিশি নির্যাতন-নিপীড়নেও খেল না হারানো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ আখতার হোসেন। জুলাই আন্দোলনে অসামান্য অবদান রয়েছে তার। এবারেই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ।