আর্কাইভ  শনিবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজনীতি এখন ভোটের মাঠে

► ঘরে ঘরে ছুটছেন প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি
► গ্রাম থেকে শহরে চলছে সভাসমাবেশ মিছিল
রাজনীতি এখন ভোটের মাঠে

আসনভিত্তিক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপাতে ইসির নির্দেশ

আসনভিত্তিক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপাতে ইসির নির্দেশ

দেশের কল্যাণে ঐকবদ্ধ না হলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান

দেশের কল্যাণে ঐকবদ্ধ না হলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর তথ্য চেয়ে ডিএমপির অনুরোধ

ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর তথ্য চেয়ে ডিএমপির অনুরোধ

হাদির ঘটনায় ইসির কপালে চিন্তার ভাঁজ, সাঁড়াশি অভিযানে জোর

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, রাত ০৯:০৬

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: তফসিল ঘোষণা দিতে না দিতেই একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনেরও (ইসি) ‘টেনশন’ বেড়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনারদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে কড়া বার্তা দেওয়ার কথা ভাবছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। 

গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একদিন পার না হতেই ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার রাস্তায় মাথায় গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পাঠ চুকিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন হাদি। পাশপাশি আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ করার আন্দোলন করছিলেন। ছিলেন ভারত ও আওয়ামী লীগবিরোধী শক্ত অবস্থানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বক্তব্য আলোচনায় এলে দেশব্যাপী পরিচিতি পান।

ঝালকাঠির নলছিটি থেকে ওঠে আসা হাদি শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাজধানীর বিজয়নগরে নিজের প্রচার চালাচ্ছিলেন। দুপুরে তিনি বিজয়নগরের কালভার্ট রোড দিয়ে অটোরিকশাযোগে যাওয়ার সময় আগে থেকে তাকে অনুসরণ করা দুজন মোটরসাইকেলে এসে সরাসরি হাদির মাথায় গুলি করে। তখন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন ও প্রাথমিক চিকিৎসার পর বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন হাদি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

হাদির ওপর হামলার ঘটনা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে রূপ নিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনি মাঠে সামনে আরও কত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে, তা নিয়েই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সবার মাঝে। অনেকেই বলছেন, তেমন কিছু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে কতটুকু সক্ষম হবে নির্বাচন কমিশন, তা এখন আলোচ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করলেও অ্যালার্মিংও মনে করছেন। তিনি বলেন, আমরা দু’বার সশস্ত্র বাহিনীসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তফসিলের আগেই বৈঠক করেছি। এক্ষেত্রে সবাইকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও হয়তো চেষ্টা করছে। কিন্তু শতভাগ তো আর সম্ভব হয় না। ইতোমধ্যে লুট হওয়া অস্ত্রের বেশিরভাগ উদ্ধার হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর ইসি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি-না, এ সন্দেহ আগে থেকেই অনেকে জানিয়েছিল। আর ভোটের সময়সূচি ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্বে মধ্যে পড়ে, এমন কথা ইসি থেকেই বলা হয়েছিল। হাদির ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় ইসি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেই অনেকে মনে করছেন—আপনাদের অবস্থান কী—এমন বিষয় সামনে আনলে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা তো একা কিছু করতে পারবো না। সবার সহায়তা প্রয়োজন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ওসমান হাদির ঘটনাটি দুঃখজনক। সবাই এজন্য ব্যথিত। সরকার থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা এ নিয়ে সন্তুষ্ট। 

তফসিলের পরই দিনই এমন ঘটনা ঘটায়, সামনের দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসির উদ্যোগ কী হবে জানতে চাইলে এই নর্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আমরা শিগগিরই এ নিয়ে বসবো। আমাদের অবস্থান হলো এখনই দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। এজন্য পুলিশসহ অন্যদের কড়া বার্তা দেওয়া হবে। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা বরদাশত না করার ঘোষণা দিয়ে দলগুলোকে নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে সিইসি ওই ভাষণে বলেন, আমাদের ভাইবোন সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান, যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং বিশ্ব দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা একই প্রত্যাশা ধারণ করেন এবং একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ভাবমূর্তি রক্ষার বিষয়টি নিয়ে বলেন, ভোটের সময় অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিফলনও ঘটিয়ে থাকে। এটা এদেশে হয়ে থাকে। হাদির ক্ষেত্রেও তা হয়েছে কি-না আমরা জানি না। সরকার এ ঘটনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে উদঘাটন করতে ও দোষীদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আমরা এখনো মনে করি, সামনে ভোটের পরিবেশ সুন্দর হবে। আর এই ঘটনা নির্বাচনকেন্দ্রিক হয়েছে কিনা, সেটাও স্পষ্ট নয়। কাজেই সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে হবে। হাদির ওপর হামলার ঘটনাটি যথেষ্ট উদ্বেগের। 

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত, আপিল দায়েরের শেষ সময় ১১ জানুয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি। প্রচার কার্যক্রম চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগ অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

মন্তব্য করুন


Link copied