আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

উত্তোলন বৃদ্ধি বিক্রি নেই, খনিতেই মজুদ আছে ১০ লাখ টন পাথর

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, দুপুর ০১:২২

মধ্যপাড়া ইয়ার্ডে পাথরের স্তূপ। ছবি: সংগৃহীত

Advertisement Advertisement

অনলাইন ডেস্ক :  দেশের একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ পাথরের খনি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া। খনিতে উত্তোলন বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে মজুদ। মধ্যপাড়া পাথর খনির ৯টি ইয়ার্ডে বর্তমানে ৫ মিমি আকারের প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পাথর মজুদ হয়েছে। পাথরের মজুদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পাথর বিক্রি স্বাভাবিক না হলে বন্ধ হতে পারে খনির উৎপাদন কার্যক্রম। এমন হলে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে হাজারো শ্রমিক।

জানা যায়, দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদার বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে গুণগতমান সম্পন্ন এবং দাম কম হওয়ার পরও পাথর ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অজ্ঞাত কারণে এই পাথর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

তবে খনির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি প্রয়োজন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে পাথর বিক্রিতে সুবিধা হবে এবং দেশের একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ পাথর খনিটিকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।  

খনি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়া খনি থেকে প্রতিদিন তিন শিফটে ছোট-বড় মিলে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে ৫-২০ (৩-৪) মিমি, ২০-৪০ মিমি, ৪০-৬০ মিমি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০ মিমি ও বোল্ডার রয়েছে। উত্তোলন করা এসব পাথরের মধ্যে নদীশাসনের কাজে বোল্ডার, রেলপথের জন্য ব্লাস্ট এবং বিভিন্ন নির্মাণকাজে অন্যান্য সাইজের এসব পাথর ব্যবহার করা হয়।

৯ ইয়ার্ডে মজুদ প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পাথরের মধ্যে ২ লাখ ৮০ হাজার টন বোল্ডার, ৫ লাখ ৭০ হাজার টন ব্লাস্ট এবং বাকি অন্যান্য সাইজের পাথর বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় চরম অর্থ সংকটে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ঋণ করে খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় আবারো খনির পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, হিলিসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করা বা আমদানিকৃত পাথরের শুল্ক বৃদ্ধি না করা মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রিতে আশঙ্কাজনক হারে ভাটা পড়েছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে মজুদ বৃদ্ধির কারণে খনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান জানান, আমদানিকৃত পাথরের তুলনায় মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের গুণগতমান অনেক উন্নত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন বাড়লেও দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে বিক্রি। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত সেপ্টেম্বরে শুধু পাথর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন। 

প্রসঙ্গত, দেশের একমাত্র পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ২০০৭ সালের ২৫ মে। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র এক শিফটে ৭০০-৮০০ টনের বেশি পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ছয় বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। 

২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। বর্তমানে খনি ভূগর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বসানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলী দল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন কাজ চালানো হচ্ছে। পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে চারবার মুনাফা করে আসছে খনিটি।

জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন করছে তারা। জিটিসি সুষ্ঠুভাবে খনি পরিচালনা করতে পারলে একদিকে দেশের পাথরের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হবে, অপরদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ বেকার সমস্যারও কিছুটা সমাধান হবে।  

উত্তর বাংলা/ ম.ম 

মন্তব্য করুন


Link copied