স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ ক্ষেত ও বন জঙ্গল পার করে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল হিংস্র একটি চিতা বাঘ। প্রায় কয়েক ঘণ্টা তান্ডব চালায় বাঘটি। আর এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জে এক শিশু সহ চারজনকে কামড়ে ছিল বাঘটি। অবশেষে তিন ঘন্টার চেষ্টায় বাঘটিকে পিটিয়ে মারতে সক্ষম হয় এলাকবাসী। পরে মরা বাঘটিকে ঝুঁলিয়ে রাখে তারা। দুপুরে রংপুর বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচির্ত্য সংরক্ষণ দল এসে মৃত বাঘটিকে নিয়ে যায়।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা আকালিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ১০টায় ওই চিতা বাঘের আক্রমণে শিশুসহ ৪ জন আহত হন। আহতরা হলেন, মাগুরা উত্তর পাড়া গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল (৮), আকালিপাড়া গ্রামের বুদু মিয়ার ছেলে বুলেট মিয়া (২৮), একই গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে ফেরদৌস আলম (৩৫) ও ছকমাল হোসেনের ছেলে নায়েব আলী (৪০)। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঘটি কোথা থেকে ও কীভাবে লোকালয়ে এসেছে তা তারা জানে না। সকাল ১০টায় রংপুর-দিনাজপুর তিস্তা সেচ ক্যানেলের সেতু সংলগ্ন একটি গাছে চিতা বাঘটিকে বসে থাকতে দেখে শিশুরা চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী বাঘ দেখার জন্য ভিড় জমায় ও তখন প্রশাসনের মাধ্যমে বন বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। বন বিভাগ থেকে কেউ এসে পৌঁছানোর আগেই বাঘটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে নেমে শিশুসহ চারজনকে আক্রমণ করে। পরে স্থানীয়রা বাঘটিকে ধাওয়া করা শুরু করে। তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে শেষে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাঘটিকে মেরে ফেলে। এরপর তারা মৃত বাঘটিকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। বাঘটিকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভিড় জমায়।
মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু জানান, বাঘটি হামলা করার কারণে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বন বিভাগের লোকজন এসে মৃত বাঘটিকে নিয়ে যায়। আক্রমণে আহতদের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রংপুর বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচির্ত্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় জানান, বাংলাদেশের বর্ডার পাশ্ববর্তী এলাকা ভারতের কুচবিহার বন হতে পথ ভূলে অথবা খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসতে পারে। আমাদের বন বিভাগের কর্মকর্তা সহ একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত বাঘটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। তিনি জানান, এলাকায় যদি বাঘ বা অন্য কোনো প্রাণী দেখতে পেলে দ্রুত বন ও প্রাণী বিভাগ, সংশ্লিষ্ট থানা, ফায়ার এন্ড ডিফেন্স সার্ভিসকে অবগত করতে হবে। জীবন রক্ষায় এলাকাবাসী বাঘটিকে মেরেছে। তবে চেষ্টা করবে যেনো তাকে না মেরে জীবিত ধরতে। যেনো সেই প্রাণীটিকে জীবিত সংরক্ষণে রাখা যায়।