আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৪ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

চীনের চুড়ান্ত পদক্ষেপ
ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে তিস্তা থেকে বাদ পড়লো ভারত

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

ছাত্রদের ঝরে কাঁপছে প্রতিবেশীর ঘর ! মোদির সামনে বাংলাদেশের ছায়া!

“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

বাস্তবায়ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা
“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

গাইবান্ধার ‘লাকি ব্যাম্বু’ যাচ্ছে দুবাই-কাতারে

শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দুপুর ০২:৫৭

Advertisement

গাইবান্ধা: উত্তরের জেলা গাইবান্ধা সদর থেকে ৩৬ কিলোমিটার উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। আরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম পাঁচগাছি শান্তিরাম।

গ্রামের বুক চিরে পিচঢালা সড়ক চলে গেছে উপজেলা সদরের দিকে। সড়কের দুপাশে যেদিকে চোখ যায় সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ করা হয়েছে ধানসহ নানা রবিশস্য।

চারিদিকে গাঢ় সবুজের ভিড়ে ব্যতিক্রম এক একর জমিজুড়ে নানা রঙের ছোট আকৃতির বাঁশ বাগান, যা নজর কাড়ে পথচারীদের।

ছোট আকৃতির নান্দনিক এ বাঁশের নাম লাকি ব্যাম্বু। অর্থাৎ ভাগ্যবান বাঁশ। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অভিজাত বাসাবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ইন্ডোর প্ল্যান্ট হিসেবে মানুষের অন্যতম পছন্দের তালিকায় রয়েছে লাকি ব্যাম্বু। দিনদিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এ বাঁশ। উপজেলার পাঁচগাছি শান্তিরামের হাফিজ এবং হাসিবুল দুই ভাই মিলে লাকি ব্যাম্বু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে হাফিজ এলাকায় থেকে এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। আর হাসিবুল বর্তমানে ঢাকায় থেকে তাদের ব্যবসা দেখভাল করছেন। 

লাকি ব্যাম্বু ক্ষেত

লাকি ব্যাম্বু ক্ষেত

তাদের উৎপাদিত লাকি ব্যাম্বু থেকে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের টবসহ বাঁশ এখন দেশের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে কয়েক বছরে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন দুই ভাই।

তাদের বাগান ঘুরে দেখা যায়, ওই গ্রামে সুন্দরগঞ্জ- গাইবান্ধা সড়ক ঘেঁসে বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে চাষ করা হয়েছে লাকি ব্যাম্বু। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। জমিতে লাকি ব্যাম্বু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন হাফিজ। বাগানের পাশে সড়ক ঘেঁসে বানানো ঘরে বসে পরিপক্ক লাকি ব্যাম্বু দিয়ে তৈরি করছেন নজরকাড়া বিভিন্ন ডিজাইন।

হাফিজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে ভাই হাসিবুলকে নিয়ে প্রথমে পাঁচ শতাংশ জমিতে লাকি ব্যাম্বুর চাষ শুরু করেন হাফিজ। এরপর ঘুরতে থাকে তাদের ভাগ্যের চাকা। এখন তিন বিঘা জমিতে তিনটি প্লটে শোভা পাচ্ছে হলুদ, সবুজ, গাঢ় সবুজ ও ডোরাকাটা সাদা লাকি ব্যাম্বু। নান্দনিক এ ব্যাম্বু থেকে তৈরি বাহারি ডিজাইনের টব এখন যাচ্ছে ওমান, কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে। ইন্ডোর প্লান্ট লাকি ব্যাম্বু

ইন্ডোর প্লান্ট লাকি ব্যাম্বু

তিনি আরও জানান, লাকি ব্যাম্বু চাষে শুধু তাদেরই নয়, এলাকার ছয়-সাতজন বেকার যুবকেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে এটি আরও বড় করার ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।  

বাজারজাত সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এখানে এক, দুই, তিন লেয়ার পিরামিড, বারো বেনী, ষোল বেনী, চব্বিশ বেনী, বিভিন্ন ধরনের খোপ, কলস তৈরি করে থাকি। লাকি ব্যাম্বুতে তৈরি শোপিস গৃহসজ্জায় রাখার মতো একেকটি ডিজাইনের দাম এক-দেড়শ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। উৎপাদিত লাকি ব্যাম্বু দেশ ছাড়াও ওমান, কাতার, দুবাই এবং সৌদি আরবে ধারাবাহিকভাবে পাঠানো হচ্ছে। শুধু দেশের বাইরে লাকি ব্যাম্বু রপ্তানি করে প্রতিবার তাদের আয় হয়েছে দুই থেকে তিন লাখ টাকা।

মধ্যপ্রাচ্যে লাকি ব্যাম্বুর ব্যাপক চাহিদার কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মরুভূমি। ফলে সেখানে গাছপালা কম থাকায় অক্সিজেনের মাত্রাও কম। লাকি ব্যাম্বু ঘরে রাখলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। পাশাপাশি সৌন্দর্যের বিষয়টিও আছে।

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, প্রথমবারের মতো লাকি ব্যাম্বু চাষ করে দুই ভাই সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। লাকি ব্যাম্বু চাষের শুরু থেকেই তাদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তাদের সাফল্যে অনেকে আগ্রহী হওয়ায় আগামীতে লাকি ব্যাম্বু চাষাবাদ আরও বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লাকি ব্যাম্বু দিয়ে বিভিন্ন শোপিস বানানো হচ্ছে

লাকি ব্যাম্বু দিয়ে বিভিন্ন শোপিস বানানো হচ্ছে

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, লাকি ব্যাম্বু উদ্ভিদের রং গাঢ় সবুজ। এটি বাড়ির অন্তঃপুরে রাখলে ঘরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে এবং সবুজের দিকে তাকালে চোখের দৃষ্টিশক্তিও স্বাভাবিক থাকে। উদ্ভিদটিকে বাঁশ গাছ বলা হলেও এ গাছ আসলে বাঁশ প্রজাতির নয়, এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলের লিলি (Dracaena sanderiana) প্রজাতির গাছ।

মন্তব্য করুন


Link copied