স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, জুলাই ঘোষণাপত্রকে জাতীয় দলিল হিসেবে স্বীকৃতি এবং জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে নীলফামারীতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে প্রগতিশীল জুলাই ঘোষণাপত্র ও শহীদ পরিবার, নীলফামারী-এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এরআগে একটি প্রতিবাদ মিছিল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর থেকে বের করা হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার আগে গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক আন্দোলনের ইতিহাস পরিকল্পিতভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। বিশেষ করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ, যা মুক্তিকামী মানুষের অধিকার ও সংগ্রামের দলিল, তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। বক্তাদের মতে, এগুলো কেবল আঞ্চলিক ইতিহাস নয়, বরং গোটা দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক। বক্তারা আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে উঠে এসেছিল জনগণের অধিকার, মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম এবং গণআন্দোলনের দিকনির্দেশনা। অথচ এ দলিল রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত বা স্বীকৃত না হওয়ায় শহীদ ও আহত পরিবারগুলো এখনো বঞ্চনার শিকার। তাদের আর্থিক সহায়তা, সামাজিক মর্যাদা ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি আজও নিশ্চিত হয়নি। তারা বলেন, জুলাই সনদ শুধু একটি কাগজ নয়, এটি মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগের দলিল। শহীদদের রক্তে লেখা এই দলিল বিকৃত হতে দেওয়া যাবে না।
মানববন্ধন শেষে শহীদ পরিবার ও আহতদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, গণঅভ্যুত্থানের সময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে স্বৈরাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। অনেকে জীবন দিয়েছেন, অনেকেই আহত হয়েছেন, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আজও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি।
স্মারকলিপিতে প্রধান দাবিগুলো ছিল:
১. জুলাই ঘোষণাপত্র সংরক্ষণ, গবেষণামূলক প্রকাশনা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রচার।
২. জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।
৩. শহীদ ও আহত পরিবারকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ভাতা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
৪. গণঅভ্যুত্থান স্মৃতিসৌধের সংস্কার, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
৫. জাতীয় দিবসে শহীদ পরিবারের সদস্যদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা।
৬. পাঠ্যপুস্তকে গণঅভ্যুত্থান ও জুলাই ঘোষণাপত্রের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা।
শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি শাহরিয়ার হোসেন হাবিল জানান, তাদের দাবি কেবল আর্থিক সহযোগিতার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয়জনরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আজও তাদের নাম ও আত্মত্যাগ যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করা হয় না। আমাদের সন্তানরা যেন জানে তাদের পূর্বসূরিরা কীভাবে দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন, এটাই আমাদের প্রধান দাবি।
সমাবেশে উপস্থিত বক্তা ও অংশগ্রহণকারীরা একযোগে ঘোষণা দেন, ইতিহাস বিকৃতির যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে দ্রুত জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায় এবং মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছাবে এবং ইতিহাসের বিকৃতি বন্ধের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা কিছুটা হলেও ঘুচবে।