নিউজ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘দেশে আইন থাকলেও সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগের অভাব রয়েছে, যা সরকারের অন্যতম বড় দুর্বলতা।'’সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি জানান, 'আমাদের দেশে প্রকাশ্যে ধুমপান করা নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা কেউ মানে না। হাসপাতাল, বাসা, এমনকি আমাদের সামনেই সকলে প্রকাশ্যে ধূমপান করছে - কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছে না। এটা যেন এক অদ্ভুত দেশ, যেখানে আইন থাকলেও তা মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।'
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) এর সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালার প্রতিপাদ্য ছিল - 'মাতৃদুগ্ধপানকে অগ্রাধিকার দিন, টেকসই সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলুন।'
কর্মশালায় নবজাতকের যত্নে পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব উঠলে উপদেষ্টা বলেন, 'এই ছুটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। যদি দেওয়া হয়, তাহলে শর্ত থাকা উচিত - পিতা কত ঘণ্টা শিশুর ও মায়ের জন্যে সেবা করেছেন, তা লিখিতভাবে প্রমাণ দিতে হবে। তবেই আমি এই ছুটির পক্ষে।'
তিনি আরও বলেন, একজন মা যখন সন্তান ধারণ করেন, তখন থেকেই তার যত্ন শুরু হওয়া উচিত। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্যে মাকে প্রস্তুত করতে হয়, কিন্তু এই জ্ঞান কে দেবে? হাসপাতালের ধারণক্ষমতা সীমিত, রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ - চিকিৎসকদেরও দোষ দেওয়া যায় না।
মাতৃদুগ্ধপান নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, 'কীভাবে প্রচার চালালে মানুষ সচেতন হয়, সেটা গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবনায় রাখা প্রয়োজন। মসজিদ ও মন্দিরভিত্তিক প্রচারও কাজে আসতে পারে।'
কর্মশালায় বিবিএফ-এর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এস কে রায় জানান, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো গেলে প্রতিবছর প্রায় ৫১ হাজার শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
বিবিএফ-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মাতৃদুগ্ধপানের হার ৮ শতাংশ কমেছে, যা উদ্বেগজনক। এই হার রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, 'মায়ের দুধ নিশ্চিত করতে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মানসিক দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। সব শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ নিশ্চিত করতে হবে সামাজিকভাবে।'
এছাড়াও কর্মশালার সভাপতি, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী বলেন, 'একটি মেধাবী প্রজন্ম গড়তে হলে শিশুর জন্যে মায়ের দুধ নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, এটি শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।'