আর্কাইভ  রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫ ● ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫
জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

নিভে গেছে দুই চোখের আলো শরীরেও স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা

রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, দুপুর ০৩:০২

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জীবিকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা (টমটম) নিয়ে সড়কে বের হন রাব্বি হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্টের সেই বিকালে হঠাৎ শুনতে পায় স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছে।

ফ্যাসিবাদ পতনের সেই আনন্দ উদযাপন করতে শ্রীমঙ্গলের চৌমুহনা এলাকায় বিশাল মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। সেই মিছিলে অংশ নেয় ১৭ বছর বয়সি কিশোর রাব্বি। কিন্তু হঠাৎ মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় রাব্বির চোখ ও শরীরে ৩০টি ছররা গুলি লাগে। সেই গুলি কেড়ে নেয় রাব্বির চোখের আলো আর তখন থেকেই জীবন-জীবিকার চাকাও বন্ধ তার।

রাব্বি হোসেন শ্রীমঙ্গলের আশীদ্রোন ইউনিয়নের দক্ষিণ মুসলিমবাগ এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পেশায় ছিল টমটমচালক। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষে বড় চাকরি করে পরিবারের কষ্ট লাঘবের। কিন্তু সংসারের টানাপোড়েনের কারণে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করা হয়নি। দিনমজুর বাবার একা আয়ে পরিবার চালানো ক্রমেই কঠিন হওয়ায় ২০২২ সালে পরিবারের বড় ছেলে রাব্বি লেখাপড়ার ইতি টেনে টমটম চালানো শুরু করে। বাবা-ছেলের আয়ে পরিবারে যখন কিছুটা স্বস্তি বয়ে নিয়ে এসেছিল, ঠিক তখনই পরিবারটির ওপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

রাব্বি জানায়, দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন তার। চোখের আলো নিভে যাওয়ায় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে এই কিশোরের। এ কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে নিজের উন্নত চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের দাবি তার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা কিশোর রাব্বি হোসেনের বাম চোখ, গলা, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০টি গুলি লাগে। একটি গুলি তার কণ্ঠনালিতে প্রবেশ করে। ঘটনার পরপরই রাব্বিকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে সেখান থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালে তার কণ্ঠনালি থেকে গুলি বের করা হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন করে তার বাম চোখ তুলে ফেলা হয়। সে সঙ্গে ডান চোখে লেন্স সংযোজনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু টাকার অভাবে ডান চোখে লেন্স সংযোজনসহ শরীরের গুলি বের করার ব্যয়বহুল চিকিৎসা বহনে অক্ষম তার পরিবার।

রাব্বি জানায়, আমার চোখ থেকে এখনো ময়লা বের হয়। টাকা-পয়সার অভাবে আমার চোখের পুরোপুরি চিকিৎসা করাতে পারছি না। পরিবারের লোকজন আত্মীয়-স্বজন থেকে ঋণ করে এনে আমার চিকিৎসা করান। বর্তমান সরকার থেকে কোনো কিছু দেয়নি আমাকে। তাই সরকারের কাছে একটাই আবেদনÑআমার চিকিৎসার জন্য সহায়তা এবং আমি ভবিষ্যতে যেন কোনো কিছু করে খেতে পারি, তার ব্যবস্থা করে দিন।’

মা রুনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের চোখে যে গুলি ঢুকছে আমরা বুঝিনি। হাসপাতাল থেকে ডাক্তার তাকে মৌলভীবাজারে রেফার করে। সেখানেও বলেনি তার চোখে গুলি ঢুকেছে। যদি তারা বলত, তবে যেমনেই হোক তারে ঢাকা নিয়া যাইতাম, তখন ঠিকই আমার ছেলের চোখটা বাঁচত।’

বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাব্বির একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। শরীরেও অনেকগুলো গুলি লেগেছে। সরকারের কাছে আবেদনÑ আমার ছেলের একটা কর্মের ব্যবস্থা করে দিক। আমি অন্য কোনো কিছুই সরকারের কাছে চাই না।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ রচিত হয়। আন্দোলনের সময় আমি অন্যত্র দায়িত্ব পালন করি। যদি কেউ সেই আন্দোলন-মিছিলে আহত হয়ে থাকে এবং আমার কাছে আসে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসা ও সহায়তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied