স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নিজ বাড়ি থেকে মা ও দুই কণ্যা শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে নীলফামারী সদর থানায়। শুক্রবার(২ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহত গৃহবধূর ভাই আসাদুজ্জামান নূর ওরফে আসাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
শনিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) সদর থানার ওসি তানভীরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা চেষ্টার অপরাধে ৩০২ ও ৩০৯ ধারায় আশিকুল হক মোল্লা বাবুর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইন অনুসারে কেউ হত্যা করলে তাকে ৩০২ ধারা প্রয়োগ করে বিচার হয়, অন্যদিকে ৩০৯ ধারায় বিচার হয় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে। ওসি আরো জানান, শনিবার দুপুরে লাশ তিনটির ময়না তদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রির্পোটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ও নিহত গৃহবধু অন্তসত্ত্বা ছিলনা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চুড়ান্ত ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আর কোনো কিছু বলা সম্ভব না।
মামলার বাদী আসাদুজ্জামান নূর ওরফে আসাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিশ্চিত হয়েছি আমার দুলাভাই আশিকুল হক মোল্লা বাবু আমার বড় বোন ও দুই ভাগনিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর সে নিজেই গলা কেটে আত্মহত্যার চেস্টা চালায়। তাকেই আসামীকে এই মামলা দায়ের করি।
পুলিশ জানায়, শনিবার বেলা ১২টায় জেলার মর্গে আশিকুলের স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫), তাঁর দুই মেয়ে তানিয়া আক্তার (৮) ও জারিন আক্তার (৫) সহ তিনটি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
ময়না তদন্তে প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি পাওয়া গেছে বলে জানান নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি কোন বিষক্রিয়া রয়েছে কিনা তার জন্য তিন লাশের খাদ্যনালী ভিসারার জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, তহুরা বেগম অন্তসত্ত্বা ছিলেন না। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বাদ আছর মা ও দুই শিশু কণ্যার নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের বন্দরবাজার মোল্লাপাড়া জামে মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে আশিকুল মোল্লার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সেখানে এমন নৃশংস ঘটনা আমাদের মেয়ে জামাই ঘটাবে, চিন্তাও করতে পারি না বলে মন্তব্য করেন আশিকুলের শ্বশুড় আব্দুল আলিম ও শাশুড়ি রাবেয়া খাতুন। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামার পুকুর ইউনিয়নের চিকলি আলাউদ্দিন পাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। তাদের মনে প্রশ্ন দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মেয়ে জামাই সংসার করছে। কোন দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়নি। কিন্তু কেন কিসের জন্য জামাই স্ত্রী ও দুই শিশু কণ্যা সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেস্টা করলো। তারাও বিষয়টি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখার দাবি করেন।
অন্যদিকে, পুলিশি পাহারায় গুরুতর জখম ও স্ত্রী ও দুই শিশু কণ্যা হত্যাকারী আশিকুল হক মোল্লা বাবু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উল্লেখ যে, গতকাল শুক্রবার সকালে নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী বন্দরবাজারে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আশিকুর হক মোল্লা ওরফে বাবু নামে ওই ফার্নিচার ব্যবসায়ী। তার বাড়ির সামনে একটি করাতকল (স মিল) এবং আয়েশা অ্যান্ড যারিন নামে একটি আসবাবের দোকান রয়েছে। এসব আশিকুলের। আশিকুল এলাকায় বাবু নামে পরিচিত। যে বাড়িটিতে তাঁরা থাকতেন, সেই বাড়িটির চারদিক দেয়ালঘেরা। বাড়ির একদিকের ঘরে তাঁরা থাকতেন, অন্য ঘরগুলো ফাঁকা। যে বিছানায় তিনটি লাশ পড়ে ছিল, তার পাশ থেকে সবজি কাটার এই রক্তাক্ত চাকু (কাটারি) উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই চাকু দিয়ে আশিকুল হক নিজেই তার গলা কেটেছে। শুক্রবার বিকালে সিআইসির রংপুর ক্রাইম সিন টিম তদন্ত শেষে লাশ উদ্ধার করে। আশিকুরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, আমার ধারণা মতে, সে মানসিক চাপের কারণে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তাকে পাবনা মানষিক হাসপাতালে চিকিৎসাও করা হয়েছিল।