নিউজ ডেস্ক: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিচ্ছেন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি এ মামলার সর্বশেষ সাক্ষী।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন আলমগীর। জবানবন্দিতে তিনি বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শিত হয় ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, আজও ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। এদিন বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে ট্রাইব্যুনালে।
এর আগে, ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। ওই দিন তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা করবেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এরপরই শুরু হবে যুক্তিতর্ক।
২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
তদন্তকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ ও তিনটি মোবাইল নম্বরের সিডিআর বা কল ডিটেইল রেকর্ড জব্দ করেন তানভীর জোহা। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তিনি পাঁচটি অডিও কথোপকথন সম্বলিত তিনটি সিডি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে সেসব ফোনালাপ শোনানো হয়।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনজন। তাদের দুজনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার রেকর্ড ও লাইব্রেরি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২২ সেপ্টেম্বর ৪৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। এর মধ্য দিয়ে ঘটনার সাক্ষ্য সম্পন্ন করেন প্রসিকিউশন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেই শুরু হবে যুক্তিতর্ক। এরপর রায়ের পালা।
এদিকে, আজও মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে এনেছে পুলিশ। তবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে এরই মধ্যে ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।