নিউজ ডেস্ক: অনুমোদন না থাকলেও চাহিদা থাকায় দেশে স্পা সেন্টারের ব্যবসা এখন রমরমা। খোদ রাজধানীতে রয়েছে শতাধিক স্পা সেন্টার। এসব স্পা সেন্টারে দর বনিয়ে ঘড়ি ধরে চলে হরেক রকম ম্যাসাজ। ম্যাসাজ করানোর নামে মূলত চলে অনৈতিক কাজ। চাইলে পাওয়া যায় মদ, বিয়ার ও সিসার স্বাদ। অভিযোগ আছে স্পা সেন্টারে গোপন ক্যামেরায় পাতা ফাঁদে একান্ত সঙ্গর আপত্তিকর ভিডিও রেকর্ড থেকে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। ফাঁদে আটকে গেলেও মানসম্মানের কথা ভেবে পুলিশের কাছে যাচ্ছে না কেউই। বরং টাকা দিয়ে আপসরফা করছেন বাধ্য হয়েই। সিআইডি, র্যাব, থানা পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময়ে একাধিক স্পা সেন্টারে অভিযান চালালেও থেমে নেই এ অনৈতিক কারবার।
প্রত্যন্ত এলাকার উঠতি বয়সি কিশোরী ও তরুণীদের উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এসব স্পা সেন্টারে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ কাজে তৎপর রয়েছে নারী পাচারকারী চক্রের অর্ধ শত সদস্য। গত ১০ ডিসেম্বর বনানীতে রিলাক জোন বিউটি পার্লার অ্যান্ড সেলুন নামে পরিচালিত একটি স্পা সেন্টারে অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগে ছয় সদস্যের একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক সাত কিশোরীসহ ১২ ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করা হয়। এ কিশোরী ও নারীদের উচ্চ বেতনের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছিল। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হয়। গত ১৬ জুলাই রাতে গুলশান-২ এর ২৪ নম্বর রোডের ৯১/বি নম্বর ভবনে একটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। গত ২৩ মার্চ মধ্যরাতে গুলশান-১-এর আরএম সেন্টারের চতুর্থ তলায় একটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৪ জনকে আটক করে র?্যাব-১।
ঢাকাতেই শতাধিক স্পা সেন্টার : গুলশানে এনজেলিকা স্পা, ৪১ নম্বর সড়কের ফ্রি বার্ড স্পা, সুইটি স্পা, মেলেডি থাই স্পা, ঢাকা স্পা গুলশান প্রিমিয়াম, সাবাইদী থাই স্পা, প্যারাডাইস স্পা, ফেমাস স্পা, গুলশান ম্যাজিক্যাল থাই স্পা, ভিআইপি স্পা, রয়েল থাই স্পা, রুপা রিলাক্সশন স্পা, গুলশান স্পা ম্যাসাজ, স্পা সেন্টার, মনিকা স্পা ঢাকা, ফোরহ্যান্ড ম্যাসাজ, এরোমা ওয়েল ম্যাসাজ, থাই নুরু ম্যাসাজ, স্পেশাল বিটুথ্রি ম্যাসাজ, এলিট টাচ স্পা, সোলেক স্পা, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে লাক্সারি থাই বিডি স্পা, সেবাডট এক্সওয়াইজেড বিউটি, ৩ নম্বর সেক্টরে ২ নম্বর সড়কে এমারেল্ড ঢাকা লাক্সারি হোটেল অ্যান্ড স্পা, মোহাম্মদপুরের মড বারবার সেলুন অ্যান্ড স্পাসহ প্রায় শতাধিক স্পা সেন্টারে ম্যাসাজের নামে চলছে অনৈতিক কাজ। যার চারপাশে সিসিটিভি বসানো, আছে বিশেষ নিরাপত্তা প্রহরী। এসবের কোনোটাতেই সরাসরি ঠিকানা দেওয়া থাকে না। হোয়াটসআপ নম্বরে কল করলে তারা ঠিকানা দেয়।
যেভাবে নেওয়া হচ্ছে বুকিং : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞাপনের সূত্রে হোয়াটসআপ নম্বরে কল করলে ‘রিফাত’ নামে এক যুবকের দেওয়া ঠিকানায় গুলশান-২ নম্বরের ৯৫ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাসায় পৌঁছে দেখা যায় বিডি রিল্যাক্স স্পা সেন্টার। সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ স্পা সেন্টার খোলা থাকে। এর রেটকার্ডে বিভিন্ন ম্যাসাজ ও থেরাপির রেট দেখা যায়। শুধু এই স্পা সেন্টার নয়, সবগুলোতেই হোয়াটসআপে কল করে বুকিং নিশ্চিত করলে পাওয়া যায় ঠিকানা। বুকিংয়ের আধঘণ্টা পর মেলে রুম। টাকা পরিশোধ করতে হয় অগ্রিম।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, স্পার নামে অবৈধ কার্যক্রমের তথ্য পেলেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গুলশান বিভাগের ডিসি রওনক আলম বলেন, স্পার নামে যাতে অনৈতিক কার্যক্রম চলতে না পারে, সেজন্য আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব বলেন, কোনো নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বা আটকে রেখে অনৈতিক কাজ করানো হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সিআইডির মানব পাচার প্রতিরোধ টিম সবসময় তৎপর থাকে। যখন কোনো স্পার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।