নিউজ ডেস্ক: ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (এফ-৭ বিজিআই) বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক, যাদের অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই আগুন ধরে যায়। বিকট বিস্ফোরণে এলাকা কেঁপে ওঠে এবং স্কুল ভবনের একাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইএসপিআর (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর) এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে ৮৩ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাসে বড় দুর্ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই প্রশিক্ষণ চলাকালে ঘটেছে, যা পিটি-৬, ইয়াক-১৩০, এল-৩৯ বা এফ-৭ টাইপ বিমানের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেছে। প্রায় প্রতি দশকেই ফ্লাইট ক্যাডেট এবং স্কোয়াড্রন লিডারদের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ছিল সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি — একদিনেই ৪৪টি বিমান বিধ্বস্ত হয়। উত্তরার দুর্ঘটনা এই তালিকায় বিরল ও ভয়াবহ সংযোজন, যেখানে যুদ্ধবিমান সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়ে এতজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
১৯৯১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য বড় দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
৯ মে ২০২৪ – ইয়াক-১৩০, কর্ণফুলী মোহনায় বিধ্বস্ত; স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত
২৩ নভেম্বর ২০১৮ – এফ-৭ বিজি, টাঙ্গাইলে বিধ্বস্ত; পাইলট নিহত
১ জুলাই ২০১৮ – কে-৮ডব্লিউ, দুই পাইলট নিহত
২ জানুয়ারি ২০১৮ – এমআই-১৭, শ্রীমঙ্গলে বিধ্বস্ত
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ – দুইটি ইয়াক-১৩০ কক্সবাজারে বিধ্বস্ত
২১ জুলাই ২০১৫ – এমআই-১৭, মিরসরাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
২৯ জুন ২০১৫ – এফ-৭এমবি, পতেঙ্গা; ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তাহমিদ নিহত
১৩ মে ২০১৫ – এমআই-১৭, চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত; ১ প্রশিক্ষক নিহত
২০ মে ২০১৩ – এল-৩৯, যশোরে ছিটকে পড়ে
৮ এপ্রিল ২০১২ – এল-৩৯, মধুপুরে বিধ্বস্ত; ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট রেজা শরীফ নিহত
২০ ডিসেম্বর ২০১০ – পিটি-৬, বরিশালে বিধ্বস্ত; দুই স্কোয়াড্রন লিডার নিহত
৮ এপ্রিল ২০০৮ – এফ-৭এমবি, টাঙ্গাইলে; স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ নিহত
২৪ এপ্রিল ২০০৬ – পিটি-৬, ঝিনাইদহে; ফ্লাইট ক্যাডেট তানজুল নিহত
৭ জুন ২০০৫ – এফ-৭এমবি, উত্তরায় বহুতল ভবনে আঘাত
৩০ জুলাই ২০০২ – এ-৫সি, চট্টগ্রামে; ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট আদনান নিহত
৩০ এপ্রিল ১৯৯১ – ঘূর্ণিঝড়ে ৪০টি এফ-৬ ও ৪টি মিল-৮ হেলিকপ্টার ধ্বংস
এই তালিকা ছাড়াও আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বিমানের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে।