আর্কাইভ  শুক্রবার ● ৯ মে ২০২৫ ● ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ৯ মে ২০২৫
ভারতশাসিত কাশ্মীরে ব্ল্যাকআউট, জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ

ভারতশাসিত কাশ্মীরে ব্ল্যাকআউট, জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ

ইসরাইলের তৈরি ড্রোন দিয়ে হামলা চালাচ্ছে ভারত

ইসরাইলের তৈরি ড্রোন দিয়ে হামলা চালাচ্ছে ভারত

পাকিস্তানে ভারতের হামলার নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন?

পাকিস্তানে ভারতের হামলার নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন?

সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অমিত শাহ’র জরুরি বৈঠক

সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অমিত শাহ’র জরুরি বৈঠক

ক্লান্তির বিভিন্ন কারণ

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, দুপুর ১০:১৫

Advertisement

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী

প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে ক্লান্তি ভর করলে বা অল্পতেই শরীর দুর্বল হয়ে ঝিমুনি ভাব চলে এলে, বুক ধড়ফড় করলে, বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব করলে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে
ডাক্তারের চেম্বারে এসে অনেককেই বলতে শোনা যায়, তারা নাকি অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন বা শরীর সব সময় ক্লান্তি ভর করে। ক্লান্তি বা অবসন্নতার উল্লেখযোগ্য সাতটি কারণ তুলে ধরা হলো-

পানিশূন্যতা/শরীরে লবণের ঘাটতি
ক্লান্তির একটি বড় কারণ পানিশূন্যতা। ব্যায়াম করুন বা সারাদিন বসেই কাজ করুন, শরীরে পানি চাই, শরীর শীতল থাকা চাই। পিপাসা পেলে বোঝা গেল শরীরে পানির প্রয়োজন। সারাদিন অন্তত ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন। তাহলে শরীর হালকা লাগবে। যাঁরা শরীরর্চচা বা ব্যায়াম করেন, তাঁরা শরীরচর্চার আধা ঘণ্টা আগে দু'গ্লাস পানি পান করুন। পানিশূন্যতায় যে ক্লান্তি ঘটে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ডায়রিয়া। এয়ারকন্ডিশন রুমে এবং শীতকালে পরিশ্রম করলেও পানিশূন্যতা অনেক সময় অনুভূত হয় না। শরীরে তখন খাওয়া-দাওয়া আর বিশ্রাম নেওয়ার পরও রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে। আবার ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হওয়ার পরও পানি ও লবণশূন্যতা সেভাবে পূরণ না হওয়ায় শরীরে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

রক্তস্বল্পতা অ্যানিমিয়া
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে এ অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বলে। নারীদের ক্লান্তির অন্যতম কারণ হলো রক্তস্বল্পতা। ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় অধিক রক্তক্ষয় হলে লৌহ বা আয়রনের ঘাটতি হয়ে থাকে। মেয়েরা তাই রক্তস্বল্পতার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করে কোষ ও দেহযন্ত্রে পৌঁছে দেয়। রক্তের হিমোগ্লোবিন সেই সূত্রে আয়রন কমে গেলে কোষ ও দেহযন্ত্র স্বভাবতই হাঁপিয়ে ওঠে। রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে লৌহ পরিপূরক ওষুধ বা আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। এ ছাড়া লিভার বা কলিজা, কচুশাক, লালশাক রক্তস্বল্পতায় খুবই কার্যকর; তাই বেশি করে খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতাজনিত দুর্বলতা রোধে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

অনিদ্রা এবং স্লিপ এপনিয়া
ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রা থেকে ক্লান্তি আসে। ঘুম খুব কম হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। পূর্ণবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হওয়া উচিত। সারাদিনের কর্মক্ষমতার জন্য ঘুম একটি বড় অগ্রাধিকার। ঘুমের একটি নিয়মিত রুটিন থাকা দরকার। শোয়ার ঘর রাখতে হবে অন্ধকার, শীতল এবং শান্ত। আবার অনেকে মনে করেন নাক ডেকে বেশ ঘুম হচ্ছে। কিন্তু ঘুমের মধ্যে সাময়িক শ্বাসরোধ বা শ্বাসবন্ধ হয়ে জেগে ওঠা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সারারাত ধরে ১০ সেকেন্ডের এমন শ্বাসবিরতিকে স্লিপ এপনিয়া বলে। এর ফলে ঘুম পরিমাণমতো হলেও ঝিমুনি ভাব চলে আসে এবং শরীর ক্লান্ত লাগে। দুশ্চিন্তার কারণে অনিদ্রা দেখা দিলে মানসিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। যদি কারণ স্লিপ এপনিয়া হয়, তবে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অথবা পালমনোলজিস্টের উপদেশ সহকারে ব্যবস্থা নিন।

হাইপোথাইরয়েডিজম
দেহের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ক্লান্তিবোধ আসতে পারে। মানুষের শরীরের অন্যতম প্রধান নালিবিহীন গ্রন্থি বা এন্ডোক্রাইন গ্লান্ড হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থি। এ গ্লান্ডটি গলার সামনের অংশে অবস্থিত। আমাদের দেহের বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাইরয়েড গ্রন্থি। কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন উৎপাদন কমে গেলে তাকে হাইপোথাইররেডিজম বলে। গ্রন্থির কাজকর্ম কমে গেলে, বিপাক চলে ধীরে ধীরে। ফলে শরীরে এনার্জি কম উৎপন্ন হয়, শরীরের গতি স্লথ হয়ে যায় এবং ঝিমুনি ভাব চলে আসে। বাংলাদেশের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতির কারণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে। রক্তে হরমোনের উপস্থিতি কমবেশি বুঝতে থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করাতে হবে।

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলে সুগার বা গল্গুকোজ দেহকোষে না ঢুকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে রক্তে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় ইনসুলিন হরমোনের সহায়তায় সুগার দেহকোষে ঢুকে শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা। কিন্তু ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিসের কারণে শরীর হয়ে পড়ে অবসন্ন ও শক্তিহীন। এ জন্য অল্পতেই কারও যদি ক্লান্তি ভর করে, কিছুক্ষণ কাজ করলেই যদি ঝিমুনি ভাব চলে আসে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তের গল্গুকোজ পরীক্ষা করানো উচিত।

হৃদরোগ
যে কাজগুলো একসময় সহজ মনে হতো, সেগুলো এখন কঠিন মনে হচ্ছে, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গেলে যদি সহজেই হাঁপিয়ে উঠছেন, তখন বুঝতে হবে হয়তো হৃদযন্ত্র বা হার্ট সচল আছে কিনা সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে ক্লান্তি ভর করলে বা অল্পতেই শরীর দুর্বল হয়ে ঝিমুনি ভাব চলে এলে, বুক ধড়ফড় করলে, বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব করলে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ হৃদরোগও হতে পারে আপনার আপাত অজানা ক্লান্তির উৎস।

খাবার গ্রহণে অনীহা বা ক্ষুধামান্দ ভাব
শরীরে পর্যাপ্ত জ্বালানির জোগান না থাকলে ক্লান্তি ভর করে। অনেকক্ষণ ধরে না খেলে রক্তে সুগার কমে গিয়ে হাইপোগ্‌হরাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে। এটা কিন্তু বিপজ্জনক বিষয়। তাই হেলাফেলায় সকালের নাশতা কখনও যেন বাদ না যায়। প্রতি বেলার খাবারে যেন অবশ্যই প্রোটিন এবং শর্করা থাকে। সুষম খাবার রক্তের সুগারকে স্বাভাবিক রাখে। দিনভর এনার্জি ধরে রাখার জন্য কম কম করে বিরতি দিয়ে সারাদিনের খাবার খেতে হবে। শরীরের ওজন কমাতে আজকাল পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা এ ধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তাই এই ক্লান্তির চিকিৎসা করার আগে এর অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। কারণ জানা গেলে তার ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা যায়।
[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]

মন্তব্য করুন


Link copied