আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫ ● ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫
ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের দুজন নিহত, আহত ৪

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের দুজন নিহত, আহত ৪

সেঞ্চুরিতে শততম টেস্ট রাঙালেন মুশফিক

সেঞ্চুরিতে শততম টেস্ট রাঙালেন মুশফিক

কুড়িগ্রামে স্কুলের রাস্তায় স্থাপনা নির্মাণ, যেতে না পেরে গাছতলায় স্কুলের পাঠদান

কুড়িগ্রামে স্কুলের রাস্তায় স্থাপনা নির্মাণ, যেতে না পেরে গাছতলায় স্কুলের পাঠদান

পরকীয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রেফতার

পরকীয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রেফতার

নারী নেতৃত্বের নতুন দিগন্ত: ১৩তম জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নারীরা

বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৯:৪২

Advertisement

মুনাফা  জান্নাত মীম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়। ভোটার হিসেবে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু নারীর নেতৃত্ব কেবল ভোটের সংখ্যা দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীরা প্রার্থী হিসেবে সক্রিয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সাম্প্রতিক নির্বাচনে মোট ৯৫ জন নারী প্রার্থী  অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ১৯ জন জয়ী হয়েছেন। যদিও সংখ্যা এখনও সীমিত, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীর সক্ষমতার প্রমাণ। বিশেষ করে চারজন নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন, যা প্রমাণ করে, নারীর নেতৃত্ব কেবল দলীয় সহায়তায় নয়, তাদের দক্ষতা ও প্রচেষ্টার ফলেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

নারী প্রার্থীরা সাধারণত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নের ইস্যু সামনে নিয়ে আসেন। তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, নারী নেতৃত্ব কেবল লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব নয়, এটি বাস্তব ও মানবিক উন্নয়নের প্রতিফলন। স্থানীয় উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার প্রসার—এগুলো তাদের মূল লক্ষ্য। উদাহরণস্বরূপ, জয়ী নারী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার সময় সরাসরি নারী ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে তাদের চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা তুলে ধরেছেন, এবং সেগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে নারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সহজ নয়। তারা সামাজিক বাধা, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক হুমকি এবং কখনো কখনো পারিবারিক চাপের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে নারীর অংশগ্রহণ কঠিন, যেখানে সামাজিক মানসিকতা, নিরাপত্তার অভাব এবং প্রচারণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও সংযোগ সীমিত। তবু নারীরা দৃঢ়তার সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে উপস্থিত থেকেছেন। নারী প্রার্থীদের প্রচারণা কেবল প্রচারপত্র বা সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছেন। এতে তাদের কণ্ঠ শক্তিশালী হয়েছে এবং ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, নারী নেতৃত্ব কার্যকর এবং ফলপ্রসূ।

একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, দক্ষিণাঞ্চলের এক নারী প্রার্থী স্থানীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সক্রিয় প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে তিনি বহু সভা করেছেন, ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছেন এবং বিশেষভাবে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সচেতনতা বাড়িয়েছেন। তার প্রচেষ্টা তার জয় নিশ্চিত করেছে, যা প্রমাণ করে নারীর নেতৃত্ব স্থানীয় উন্নয়নেও প্রভাব ফেলতে পারে। নারী নেতৃত্বের এই অগ্রগতি আগামী প্রজন্মের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

এটি দেখাচ্ছে, নারীর নেতৃত্ব কেবল প্রতীকী নয়; তারা নীতি-নির্ধারণ, বাজেট বিতরণ এবং স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এটি রাজনৈতিক দলগুলোকেও উদ্বুদ্ধ করছে — নারীদের সমর্থন দিলে দল শক্তিশালী হয় এবং ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ে। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা এখনও বিদ্যমান।

সংরক্ষিত আসনে নারীর অংশগ্রহণ হলেও, সাধারণ আসনে তাদের সংখ্যা এখনও কম। মোট প্রার্থীর মাত্র ৪.৭১ শতাংশ নারী, যা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর সম্পূর্ণ সুযোগ এখনও নিশ্চিত হয়নি। নারীর নেতৃত্ব স্থায়ী করতে হলে শুধু সংরক্ষিত আসন নয়, বরং সাধারণ আসনে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি। ভবিষ্যতের জন্য একাধিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সরকার, রাজনৈতিক দল এবং সমাজকে যৌথভাবে নারীর নিরাপদ এবং কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক সহায়তা, প্রচারণার মঞ্চ এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। এগুলো করলে নারী প্রার্থীরা তাদের পুরো দক্ষতা ও নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে পারবেন। তাছাড়া, নারীর অংশগ্রহণ কেবল নির্বাচনী জয় নয়; এটি সামাজিক মানসিকতাকেও পরিবর্তন করছে।

স্থানীয় পর্যায়ের নারী নেতৃত্ব যুবক ও কিশোরী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস, যা সমাজে নারীর সক্ষমতা ও স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের জন্য শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই প্রার্থীরা কার্যকর ভূমিকা রাখছেন। ১৩তম জাতীয় নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, তারা এখন কেবল ভোটার নয়; তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশীদার। তাদের জয়, উদ্যোগ এবং সাহস অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

এটি নির্বাচনের বিজয় নয়, বরং নারী ক্ষমতায়নের দৃঢ় বার্তা। সর্বশেষে বলা যায়, নারীর নেতৃত্ব দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করছে। তারা শুধু লিঙ্গের সমতা স্থাপন করছেন না, বরং নীতি-নির্ধারণ ও সমাজে মানবিক উন্নয়নের জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। ১৩তম জাতীয় নির্বাচনের এই অভিজ্ঞতা আগামী প্রজন্মের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হবে—যা তাদের আরও সচেতন, দৃঢ় এবং সক্রিয় নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

মন্তব্য করুন


Link copied