নিউজ ডেস্ক: গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে অনড় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এসব দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে এবার দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে দলটি। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে। দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকবে এই জোট। সরাসরি নির্বাচনে এই জোট অংশ নেবে কি না তা স্পষ্ট না হলেও দেশে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিপি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার বাইরের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত করা হয়নি। ফলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে একটি হতাশা জন্ম নিয়েছে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছে এনসিপি, যেখানে তারুণ্যের শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
এনসিপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ উদ্যোগে কয়েকটি নতুন এবং অপেক্ষাকৃত ছোট রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে এনসিপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। শিগগির এ নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাও আসতে পারে। এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনায় সম্ভাব্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দল ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশ।
এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনায় সম্ভাব্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দল ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশ
দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা তরুণদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ আছে, কিন্তু তারা প্রচলিত দুই রাজনৈতিক ধারার প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এই জোট সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চায়। এটি নির্বাচনী জোট নয়, বরং নীতিনির্ভর একটা রাজনৈতিক চেতনার মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে, যেখানে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।
এরই মধ্যে দলটির সঙ্গে একই চেতনার কিছু রাজনৈতিক দলের আলাপ-আলোচনা চলছে। এই জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন-বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার, দেশের মৌলিক সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। যদিও জোট গঠনের উদ্যোগের আলোচনায় অংশ নিয়েছে এমন অনেক দল গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হয়নি। তবে এসব দলকে বুঝিয়ে এনসিপির সঙ্গে একাত্মতা পোষণের জন্য আলোচনা চলমান রেখেছে দলটি।
এনসিপি আশাবাদী যে, তারা একটি বিকল্প রাজনৈতিক সংলাপের সূত্রপাত ঘটাতে পারবে, যেখানে আদর্শ, ন্যায্যতা এবং নাগরিক অধিকার থাকবে কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এটি নির্বাচনী জোট হবে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত না হলেও দলগুলো একই নীতিতে হাঁটবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক বলেন, ‘বলতে পারেন এখন এক ধরনের ইনফরমাল জোট হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে, এগুলো একেবারে স্ট্রিক নয়। এখন তো দেশে ফরমাল কোনো রাজনৈতিক জোট নেই। এক ধরনের বন্ধু বা নিকটবর্তী সংগঠন এটা আছে।’
ফরিদুল হক বলেন, ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে ধরনের সংস্কার করা দরকার, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের যে কথাগুলো আমরা বলছি-এগুলোর সঙ্গে যারা একমত এবং এগুলো একটি নতুন সংবিধানের মধ্য দিয়ে করতে হবে; পুরোনো সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে আর হবে না। এগুলোর সঙ্গে জুলাইয়ে গণহত্যাসহ গত ১৫ বছরের বিভিন্ন অপকর্মের বিচার নিশ্চিত করা। এগুলোর প্রশ্নে যারা একমত তাদের সঙ্গে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে৷ এগুলো নিয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা তো চলেই৷’
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আমরা একীভূত হচ্ছি না। তাদের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আলোচনাটা এগিয়ে নিচ্ছি, এনসিপির সঙ্গে তারা হয়তো যোগ দেবেন। সেই আলোচনাটা এগোচ্ছে, এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। পুরো পার্টি যদি আমাদের সঙ্গে চলে আসে তাহলে তাদের কীভাবে অ্যাকোমোডেট করবো সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে ধরনের সংস্কার করা দরকার, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের যে কথাগুলো আমরা বলছি-এগুলোর সঙ্গে যারা একমত তাদের সঙ্গে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা তো চলেই।’ -এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক
সারোয়ার তুষার আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনী জোটের কোনো পরিকল্পনা নেই। সংস্কার ইস্যুতে আমরা কিছু কিছু দল এক জায়গায় আসার চেষ্টা করছি। আমরা সবাই চাই জুলাই সনদের আইনি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে। সেই ইস্যুতে অনেকগুলো দলের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে।’
নির্বাচনের বাইরে কী ধরনের জোট হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আন্দোলন করলে জোট হতে পারে, কিন্তু আমরা তো এখন আন্দোলনে নেই। এর বাইরে আদর্শিক জোট হয়, তবে আমরা এখন কোনো আদর্শিক জোট করছি না। কৌশলগত কোনো জোট যদি ইলেকশনের আগে করি তখন দেখা যাবে। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করছি।’
নতুন জোট গঠনে গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণতন্ত্র মঞ্চের মতো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের যৌক্তিকতা নিয়ে তাদের (বিভিন্ন দল) সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা তাদের কনভিন্স (রাজি করানো) করার চেষ্টা করছি। অলরেডি অনেকেই কনভিন্সড।’