আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ● ১০ আশ্বিন ১৪৩০
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: আমাকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে- রাঙ্গা       পরীক্ষার কথা আগেই জানতেন সেই জোবেদা, পেয়েছিলেন ক্ষুদে বার্তাও       পাকিস্তানকে উড়িয়ে প্রথম পদক জয় বাংলাদেশের       নিয়োগ পরীক্ষায় ডাক না পাওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি       নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ এনে বেরোবি শিক্ষক তাবিউরের বরখাস্ত দাবি      

নীলফামারীতে নব নির্মিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের উদ্বোধন

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩, রাত ১২:৪৫

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ পৌরসভার সকল বর্জ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিঃষ্কাসনের লক্ষ্যে, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্প (UGIIP-III) এর আওতায় নীলফামারী পৌরসভার নব নির্মিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের উদ্বোধন করা হয়েছে। 
বুধবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বাদিয়ার মোড় সড়কে নব নির্মিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের ফলক উন্মোচন ও ফিতা কেটে অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব'র সভাপতি কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ।  
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মমতাজুল হক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার। 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কোন শুভ উদ্যোগের সফলতা আশা করা যায় না। আমরা যদি নিজেরা নিজেদের ঘর পরিষ্কার রাখি, তাহলেই শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। সবাই শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে চায়। কিন্তু নিজেদের ময়লা তারা যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরকে পরিষ্কার রাখার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ময়লা ফেলার গাড়ি প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ময়লা তুলে নিয়ে আসে। পৌরবাসীদের আরো সচেতনতার সাথে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে ফেলার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সচেতন হলেই শহর হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কেউ যদি দায়-দায়িত্বহীন থাকে, তবে এলাকার ময়লা আবর্জনা কখনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে না। নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা রাখলে পৌর কর্তৃপক্ষ সে ময়লা পরিষ্কার করবে। আমরা লাল কালি দিয়ে কারো বাড়ি চিহ্নিত করতে চাই না। সবুজ কালি দিয়ে সবুজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে চাই। এ জন্য সকলের সহযোগিতা চাই। 
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন শুধু তাত্ত্বিক নয়, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আন্দোলনও তুলে ধরে এমপি নূর আরো বলেন, এই আন্দোলনে তরুণ সমাজ যত বেশি যুক্ত হবে আন্দোলন ততই শক্তিশালী হবে। তরুণ সমাজ এখন অনেক সচেতন। তারা এখন বিদেশের মতো কোনো কিছু খেলে তার ময়লা ও প্যাকেট ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। এই শিক্ষা প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে। আমার শহর, আমার রাস্তা, আমার বাড়ি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার রাখার দায়িত্বও আমার। আজ বিদেশে গেলে রাস্তায় একটি ময়লাও দেখতে পাওয়া যায় না। সকালে উঠে সকলে নিজের বাড়ির সামনে ময়লা নিজে পরিষ্কার করে ডাস্টবিনে রেখে দেয়, গাড়ি এসে তা নিয়ে যায়। আমাদেরকে এখনটাই করে দেশ ও বিশ্বের কাছে নীলফামারীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে রোল মডেল গড়ে তুলতে হবে। 

পৌরমেয়র কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, সবাই মনে করে আমার ময়লা করার অধিকার আছে, পরিষ্কার করবে শুধু সিটি করপোরেশন। আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে ময়লা ফেলবো। নর্দমায় ফেলবো, বাড়ির উপর থেকে নিচে ছুড়ে মারবো, রাস্তায় ফেলবো আমার কোনো দায়িত্ব নেই। প্রত্যেকটা মানুষ যেন মনে করে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। দায়িত্ব শুধু সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের। এভাবে কোনো দিন একটা শহর বসবাসযোগ্য রাখা সম্ভব না। শহরে ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই রাস্তাঘাটেই ময়লা ফেলে দিচ্ছে, এগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যাচ্ছে ড্রেনে, ড্রেন থেকে নদী ও সাগরের তলদেশে গিয়ে নষ্ট করছে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ। তাই আরো সচেতনতার সাথে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব পালন করতে হবে নিজের শহরকে পরিষ্কার রাখার জন্য। 
তিনি বলেন, শহরের ময়লা অবর্জনা ফেলানোর তেমন জায়গা ছিল না। অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন গর্তে ময়লা গুলো ফেলা হতো। এখন ময়লা ফেলানো নিয়ে আর তেমন চিন্তা নেই। এখন থেকে এখানে গৃহস্থালির বর্জ্য আর মানববর্জ্য পরিশোধন করা হবে। 
তিনি আরো বলেন, ল্যান্ডফিলিং হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা পরিশোধনের সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতি। পদ্ধতিটি ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে চালু হয়েছিল। পৃথিবীর বহু জায়গায় এটি দেখা যায়। ম্যাবের সভাপতি হওয়ার পর বিভিন্ন উন্নত দেশে গিয়ে তাদের এই পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের প্রক্রিয়া দেখেছি। এরপর থেকে এটি নীলফামারী সহ অন্যান্য পৌরসভায় নিয়ে আসা যায় সেই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে দেশে একযোগে ২৭টি আধুনিক পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরী হয়েছে। দ্রুত সেগুলিও উদ্বোধণ করা হবে।

এসময় পৌর প্যানেল মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মুক্তি, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান, পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হামিদুল রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাফিজুর রশিদ মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন, নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এস.এম সফিকুল আলম ডাবলু, আই.বি.কে.বি.সি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান, অভিজাত গ্রুপের চেয়ারম্যান শামসুল হক, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তী, জেলা পরিষদ সদস্য ইসরাত জাহান পল্লবী সহ পৌরসভার সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য যে, পৌরসভার সকল বর্জ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিঃস্কাসনের লক্ষ্যে, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্প (UGIIP-III) এর আওতায় প্রায় ১৬কোটি টাকা ব্যয়ে ৩.৬৯ একর জমিতে বসানো হয়েছে গৃহস্থালী বর্জ্য আর মানব বর্জ্য পরিশোধনের আলাদা দুইটি প্ল্যান্ট। আধুনিকভাবে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য প্ল্যান্ট দুইটিতে বসানো হয়েছে চার স্থরের বিভিন্ন সাইজের পাথর আর ফিল্টার। একই প্রকল্পে নিষ্কাশন হবে পানি, তৈরী হবে জৈব স্যার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক(এডিবি), গভারমেন্ট অব বাংলাদেশ(জিওবি) ও ওপিইসি ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট(ওএফইউডি) আর্থিক সহযোগিতায় ৬ মাসে নির্মাণ কাজটি সম্পূর্ণ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আই.বি.কে.বি.সি কনস্ট্রাকশন লিঃ। 

মন্তব্য করুন


 

Link copied