আর্কাইভ  বুধবার ● ২০ আগস্ট ২০২৫ ● ৫ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২০ আগস্ট ২০২৫
দুদকের মামলায় সাজার হার কমছে, বাড়ছে খালাস

দুদকের মামলায় সাজার হার কমছে, বাড়ছে খালাস

ফেব্রুয়ারির ভোটে সংশয় দেখছে না বিএনপি

ফেব্রুয়ারির ভোটে সংশয় দেখছে না বিএনপি

নজিরবিহীন লুটপাট ‘ভঙ্গুর’ ব্যাংক খাত

হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে ঋণ কেলেঙ্কারি-পাচার
নজিরবিহীন লুটপাট ‘ভঙ্গুর’ ব্যাংক খাত

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনের আড়ালে সমন্বয়কদের চাকুরি!

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনের আড়ালে সমন্বয়কদের চাকুরি!

মধ্যরাতের আকাশে ভেসে উঠল ‘জুলাই স্মৃতি’

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, রাত ০১:২৪

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  "মেয়েদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান করতে হবে, এমনটা আমরা চাই নাই। চেয়েছিলাম একটা পরিবর্তন আসুক,” বলেন জুলাই আন্দোলনের সংগঠক নুসরাত তাবাসসুম।

মধ্যরাতে ঢাকার আকাশে উড়ল হাজারো ড্রোন, ফিরিয়ে আনলো এক বছর আগের জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া ইলিয়াস আলী, মাইকেল চাকমা থেকে বুয়েটে ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে নিহত হওয়া আবরার ফাহাদের ছবিও ভাসলো আকাশে।

এছাড়া 'পোস্ট ডিলেট কর সমস্যা হবে', 'শোনো মহাজন আমরা অনেকজন', 'আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে'সহ আলোচিত বিভিন্ন স্লোগানও আকাশে দেখানো হলো ড্রোন শোতে।

গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মেয়েরা বেরিয়ে এসে জুলাই আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল, যার মধ্য দিয়ে পতন হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের।

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে সেই দিনটিকে 'জুলাই কন্যা দিবস' হিসেবে উদযাপনের অংশ হিসেবে ড্রোন শো, গান আর কথামালা আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে 'মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম' শিরোনামে জুলাই পুনর্জাগরণের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অনেকে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। রাত সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে শুরু হয় মিউজিক্যাল ‘ড্রোন শো’।

বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকারের যৌথভাবে ওড়ানো প্রায় ২ হাজার ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয় বলে আয়োজকদের ভাষ্য।

প্রথম ধাপে দেখানো হয় কীভাবে বাংলাদেশ জুলাইয়ে এসে পৌঁছালো। দেখানো হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া গুম-খুনের চিত্র। আর দ্বিতীয় ধাপে দেখানো হয় কেমন করে ১৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হল।

এর আগে অনুষ্ঠানে গান এবং স্মৃতিচারণে উঠে আসে জুলাইয়ের নানা গল্প। গান শোনান সায়ান, এলিটা করিম ও পারসা মাহজাবীন। 'ইলা লা লা' এবং 'এফ মাইনর' ব্যান্ডের শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল।

জুলাইয়ের ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত কয়েকটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়। এর মধ্যে একটি তথ্যচিত্রে উঠে আসে বুয়েটে নিহত হওয়া আবরার ফাহাদের কথা।

অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের স্মৃতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া উমামা ফাতেমা ও নুসরাত তাবাসসুমসহ অনেকে।

জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক উমামা ফাতেমা বলেন, "জুলাই কারো একার না। জুলাই সবার, জুলাই পুরো বাংলাদেশের।"

জুলাই আন্দোলনের আরেক সংগঠক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, "২৪ জুলাইয়ের আগেও মেয়েদের রাজনীতি করা নিয়ে কটু কথা হত। ওই মেয়েটা রাজনীতি করে, মেয়েদের রাজনীতি করা যেন অপরাধ! দুঃখজনক; সেই কথা এখনো শুনতে হয়। পরিবর্তনটা হয়নি।

"মেয়েদের জন্য আলাদা করে একটা অনুষ্ঠান করতে হবে, এরকমটা আমরা চাই নাই। আমরা চেয়েছিলাম একটা পরিবর্তন হোক। জুলাইয়ের এতগুলো মেয়ে এখন কেন নাই, কেন তাদেরকে আলাদা করে এড্রেস করা লাগে? বাকি দিনগুলোতে তারা সম্মান পায় না? এই কথাগুলো বলা দরকার।"

জুলাইয়ে নারী হিসেবে নয়, নাগরিক হিসেবে পথে নেমেছিলেন বলেও জানান নুসরাত তাবাসসুম।

তিনি বলেন, "আমরা নাগরিকের দায়িত্ব থেকে আন্দোলন করেছি। কোনো কোনো ক্যাম্পাসে এখনো জুলাইয়ের নারীদের বহিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সেই ক্যাম্পাসে আজ জুলাইয়ের নারীদের নিয়ে আয়োজনও হচ্ছে। সেই সব মায়েদের ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের সন্তানদের দেশের জন্য জীবন দেওয়ার সাহস যুগিয়েছেন।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা ফেরদৌস বলেন, "নারীর অবমাননায় আমরা বুক চিতিয়ে দাঁড়াব। জুলাইয়ের ইতিহাসকে আমরা কখনোই কারো একার হতে দেব না।

“কোনো দিন আর এই মাটিতে স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না। জুলাইয়ে যেমন একটা কথা ছিল- 'আসছে ফাগুনে আমরা হব দ্বিগুন', এখন বলতে চাই আমরা হব শতগুণ।"

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি পুনর্জাগরণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতায় ছিল মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শারমীন এস মুরশিদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, ফরিদা আখতার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহাগী সামিহা, জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী তাসনিম, যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো পারভীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ইভা, চট্টগ্রামের কলি কায়েস, নারায়ণগঞ্জের তুলারাম কলেজের জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ফারহানা মালিক, মাদারীপুরের জুলাই আন্দোলনের আনিশা ও মালিহা।

এছাড়া বক্তব্য দেন নারী ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য অর্পিতা বিশ্বাস এবং সৌরভী আকন্দ প্রীতি।

অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দিপক কুমার গোস্বামী স্পিকিং’ ও ‘জুলাই বিষাদ সিন্ধু’ চলচ্চিত্র।

মন্তব্য করুন


Link copied