আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

২৫ বছর পর স্বস্তির ঈদযাত্রা ঢাকা-উত্তরাঞ্চল মহাসড়কে

সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩, রাত ০৮:৩৩

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নাম শুনলে উত্তরাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষেরা শিউরে উঠেন। ইতোপূর্বে ঈদযাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কিন্তু এ বছর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থায় দীর্ঘ ২৫ বছর পর ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঈদযাত্রায় স্বস্তিতে বাড়ি ও কর্মস্থলে ফিরেছেন মানুষ।
 
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিটি ঈদযাত্রায় যানজট ছিল নিত্যসঙ্গী। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার ও পুলিশ সদস্যদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি গেছেন। এই মহাসড়কে যাতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করতে পারে এ জন্য সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি যানজট নিরসনের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার এবং জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিআরটির ও সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারাও মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করেন।

যানবাহন চালকরা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকত। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহসড়কে পরিবহন ও যাত্রী সাধারণকে অপেক্ষা করতে হতো। ঢাকা থেকে সেতু পার হতে তিন ঘণ্টার রাস্তা পারি দিতে ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতো। সাধারণ যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হতেন। বিশেষ করে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের ঈদযাত্রার দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। প্রতিটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মস্পর্শী মৃত্যুর ঘটনা ছিল নিত্যসঙ্গী। 

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন ও যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় তটস্থ থাকতেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মহাসড়কের স্ব স্ব এলাকায় অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, পানীয় জলের সংস্থান সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট থাকতেন। যাত্রী সাধারণের প্রয়োজনে গড়ে ওঠেছিল বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান-পাট। অনেকে পানি ও হালকা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির যাত্রীদের কাছে বিক্রি করতেন। 

এ বছর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন। এছাড়া মহাসড়ক ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেনে (সাইড রোডসহ) প্রশস্তকরণ করা এবং বাকি সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ডিভাইডারবিহীন দুই লেন একমুখীকরণ (উত্তরবঙ্গমুখী) ও ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ভূঞাপুর লিংক রোড ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়ায় দীর্ঘদিনের যানজটের অবসান হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। 

শ্যামলী পরিবহনের চালক আফছার আলী, এসআই পরিবহনের চালক রাকিবুল ইসলাম ও সুপারভাইজার ফরহাদ আলী, ঈশাখাঁ পরিবহনের চালক মোকাদ্দেস, ঈশ্বরদী এক্সপ্রেসের সুপারভাইজার রায়হান, ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সুপারভাইজাররা জানান, এ মহাসড়ক তাদের কাছে যানজটের অপর নাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। 

মহাসড়ক চারলেন হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা ও পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় এবার স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পেরেছেন। যাত্রী সাধারণেরও কোনো অভিযোগ শুনতে হয়নি।

মহাসড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী শহিদুল, সাথী বেগম, সাদ্দাম হোসেন, বকুল তরফদার, কাকলী আক্তারসহ অনেকেই জানান, গত ঈদে তারা ৭-৮ ঘণ্টার যানজটে পড়েছিলেন। এবার মহাসড়কে যানজট না থাকায় সাচ্ছন্দে বাড়ি যেতে পারছেন।
 
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় এবার ভোগান্তি হয়নি। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগ ও বাসেক (বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ) সবাই মিলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ যাতায়াত করতে পেরেছেন। 

মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সেতুমুখী সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে একমুখী যাওয়া এবং ঢাকামুখী পরিবহনগুলো ভূঞাপুর হয়ে মহাসড়কে যুক্ত হওয়ায় যানবাহনগুলো একমুখী সুবিধা পেয়েছে। ফলে মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া লিংক রোডগুলোর মুখ প্রশস্তকরণ ও যথোপযুক্ত ব্যবহার করায় এবার মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পেরেছেন।

মন্তব্য করুন


Link copied