নিউজ ডেস্ক: নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বলেন, ‘‘শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাউকেই উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করতে দেওয়া উচিত নয়।’’ একই সঙ্গে, তিনি উসকানিমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, যা রাজ্যের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া বক্তৃতায়, বাংলাদেশে সম্প্রতি হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা আমাদের সবার জন্য উদ্বেগজনক।’’ তবে তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টানরা কখনও দাঙ্গা শুরু করেন না; দাঙ্গা শুরু করেন সমাজ-বিরোধীরা। আমাদের এমন কিছু মন্তব্য করা উচিত নয়, যা বাংলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘এটি আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবিকতার প্রতিফলন যে, বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘু মুসলিম উভয়েই এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।’’ রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য, তিনি সংখ্যালঘু নেতাদের সমাবেশ থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি সতর্ক করেন, ‘‘কিছু মানুষ এই পরিস্থিতিকে উত্তেজনা ছড়ানোর সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আমরা দাঙ্গা চাই না, আমরা শান্তি চাই।’’
ভারতের গণমাধ্যমের অংশবিশেষকে, বিশেষ করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রচার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এটি উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থান নয়, যেখানে মিডিয়া বা কেউ গ্রেপ্তার হবে। তবে আমি অনুরোধ করছি, ভুয়া ভিডিও প্রচার হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক দল অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, এবং উভয় সম্প্রদায়কেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন, তাদের মনে রাখতে হবে যে, এটা আপনার রাজ্য এবং আপনার জনগণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’’ মমতা আরও মন্তব্য করেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করতে চায়। তবে এটি কেন্দ্রের বিষয়। সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (BSF) দেখছে, আমরা এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা সবাই বাঙালি, একে অপরের স্নেহ এবং শ্রদ্ধার পরিচায়ক।’’
তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রধান বলেন, ‘‘আপনারা বাংলা, বিহার এবং ওড়িশা দখল করবেন আর আমরা ললিপপ চুষবো? এমনটিও ভাববেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকরা আক্রান্ত হন, আমরা তা কখনও সহ্য করব না। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব এবং যদি প্রয়োজন হয়, তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের প্রিয় মানুষ, পরিবার এবং সম্পত্তি সেখানে রয়েছে। আমরা আশা করি ভারত সরকার এই পরিস্থিতিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। তবে ধর্মীয় নিপীড়ন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটুক, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই।’’