নিউজ ডেস্ক: একই নামে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তির পাশাপাশি পরিচিতির সংকটও দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার আগে নামসর্বস্ব হয়ে পড়ে যেসব দল তার মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং স্বাধীনতার পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
ন্যাপ প্রথমে ভাঙনের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। এর পর থেকে ন্যাপ ভাসানী ও ন্যাপ মোজাফ্ফর নামে দুটি স্রোতধারার সৃষ্টি হয়। প্রথমটি চীনপন্থি এবং পরেরটি মস্কোপন্থি হিসেবে রাজনীতিতে বিচরণ করতে থাকে। এ দুটির নেতৃত্ব ভেঙে একাধিক নেতৃত্বেরও সৃষ্টি হয়।
১৯৭২ সালে গঠিত জাসদ ভাঙনের সম্মুখীন হয় শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে। সে থেকে জাসদ (রব) ও জাসদ (সিরাজ) নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে জাসদ (ইনু) নামে আরেকটি নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। খালেকুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে জাসদ ভেঙে বাসদের সৃষ্টি হয়। ভাঙাভাঙির মুখে অনেক নেতাই বিভিন্ন নামে দল গঠন করেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও উপদলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে বারবার ভাঙনের মুখে পড়ে। একইভাবে একসময়ের ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টিও এখন ছয়টি দলে বিভক্ত।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বস্তুত রাজনীতি এখন বিরাট ব্যবসা। দল ছোট হোক আর বড় হোক, পদপদবি বিক্রি হয় মোটামুটি সব দলেই। টাকা দিয়ে দলীয় পদ কিনে ওই পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করা সহজ। এতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানান সুযোগসুবিধা নেওয়া যায়। আবার ছোট দল হলেও বড় দলের আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেওয়া যায়। বড় দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে ভবিষ্যতে বড় নেতা হওয়া, এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়। নিকট অতীতেও এক দলের এক নেতার গাড়িতেও পতাকা উড়েছে। অর্থাৎ জোটগত হয়ে এক দলের এক নেতাও দেশের মন্ত্রী হয়েছেন। আবার এমন কিছু নেতা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁরা নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ালেও জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। তাঁরা জোটের কারণে আইনপ্রণেতা হয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই যেহেতু বড় দলগুলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে বড় জোট গঠন করে দলীয় ক্ষমতার প্রদর্শনের জন্য, তাই সে জোটে যুক্ত হয়ে বড় দলের শরিক পরিচয় দিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ পরিষ্কার করা যায়। আবার অপেক্ষাকৃত ছোট দল হলে তারা নিজেরা না জিততে পারলেও শরিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। এ রকম নানান সমীকরণ কাজ করে ছোট ছোট দল গঠনের পেছনে।
একসময়ের ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টি এখন ছয়টি দলে বিভক্ত। নেতাদের অন্তঃকোন্দলের কারণে বিভিন্ন সময় এ দলে বিভক্তি এসেছে। এর মধ্যে তিনটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। সেগুলো হলো জাতীয় পার্টি (জি এম কাদের), জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। অন্য দলগুলো হচ্ছে জাতীয় পার্টি (রওশন), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় পার্টি (আনিসুল-হাওলাদার)।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল নামেও একাধিক দল রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাহবুব), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (রেজা) উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিস্ট লীগ নামেও রয়েছে একাধিক দল। এগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ (অসিতবরণ), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ। সাম্যবাদী নামে দুটি দলের দেখা পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (দিলীপ বড়ুয়া), সাম্যবাদী দল (জাকির)। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে মন্ত্রী হয়েছিলেন।
গণতন্ত্রী পার্টি নামে দুটি দলের দেখা পাওয়া গেছে। দল দুুটি হলো গণতন্ত্রী পার্টি (শাহাদাৎ) ও গণতন্ত্রী পার্টি (ব্যারিস্টার আরশ)। খেলাফত মজলিস নামে দুটি দলের নিবন্ধন রয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিস। ওয়ার্কার্স পার্টি নামেও দুটি দলের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। ইসলামী ঐক্যজোট নামেও দুটি দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে আসছে। এগুলো হচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট।
এলডিপি নামে দুটি দল আছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ এলডিপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এ ছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নামেও দল আছে।