নিউজ ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বে কোনো একটি দেশের জ্বালানি সক্ষমতা সেদেশের সামর্থ্যের পরিমাপক হয়ে উঠছে। এজন্য জ্বালানি খাতের ওপর দিন দিন মনোযোগও বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ খাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে সেটি সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ভালোই টের পেয়েছে আমদানিনির্ভর দেশগুলো।
বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজস্ব শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় কাটেনি জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকি। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। বার্ষিক ১৫ লাখ টন পরিশোধন সক্ষমতার ওই প্ল্যান্টটি ১৯৬৮ সালে উৎপাদনে যায়। এর তিন বছর পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
গত কয়েক বছর ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট চলছে তাতে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় হবে—এমন একটি প্রকল্পের অর্থসংস্থানের বিষয়টি বিপিসির হাইপ্রোফাইল কমিটির প্রতিবেদনে না থাকা ‘দূরভিসন্ধিমূলক’
কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫৪ বছরেও নতুন কোনো পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
১৫ লাখ টনের বেসরকারি রিফাইনারি অনুমোদনে বিপিসির প্রাথমিক সুপারিশ
প্রায় ১২ বছর ধরে নানান জটিলতা তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ৩০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার ইআরএল-২ প্রকল্পটি। এরমধ্যে অতিগোপনে কমিটি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৫ লাখ টনের একটি বেসরকারি রিফাইনারি অনুমোদনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে প্রাথমিক সুপারিশ করেছে বিপিসি।
প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ থাকবে কি না, নাকি দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ হবে, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপনের জ্বালানি নীতিমালাটি বাতিলের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতর আলোচনা হয়। কিন্তু পরে নীতিমালাটি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ওই নীতিমালার আলোকে ১৫ লাখ টনের রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আবেদন করে সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড (এসপিএল)। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপ টি কে গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
এরপর জ্বালানি বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) জাহিদ হোসাইনকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে বিপিসি। ওই কমিটিকে প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শনসহ প্রতিষ্ঠানের (এসপিএল) আবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে কমিটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারির একজন ব্যবস্থাপককে কো-অপ্ট করা হয়।
নিজেদের প্ল্যান্ট করার আগে তারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে রিফাইনারি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন মাফিয়া গ্রুপকে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাতে দুদিকেই লাভ। একদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো ব্যবসা হবে, লাভের একটি অংশ সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে যাবে।- এম শামসুল আলম
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের কমিটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে জুলধা ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির সিআরইউ প্ল্যান্ট এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পের স্থান পরিদর্শন করেন। গত ৮ এপ্রিল এসপিএলের ১৫ লাখ টনের নতুন রিফাইনারি করার বিষয়ে সুপারিশসহ বিপিসি চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন সাত সদস্যের ওই কমিটি।

সম্প্রতি বিপিসির ওই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে কত টাকা বিনিয়োগ হবে, বেসরকারি এ প্রকল্পের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কোন দেশ থেকে আনা হবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা কীভাবে সংস্থান করা হবে, সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ থাকবে কি না, নাকি দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ হবে, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই প্রতিবেদনে।
নতুন রিফাইনারি করার আবেদনটি অন্তর্বর্তী সরকারের। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে গিয়েছে। এখনো প্রাথমিক অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়।- জাহিদ হোসাইন
বিপিসি চেয়ারম্যান, গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও সুপার পেট্রোকেমিক্যাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও সম্ভাব্য প্রকল্পে বিনিয়োগের সঠিক আর্থিক পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু অতিগোপনে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের রিফাইনারির প্রস্তাবিত প্রকল্পের সুপারিশ করেছে বিপিসি।
এর আগে গত ১ জুলাই ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি রিফাইনারি আবেদন এবং কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান কোনো সদুত্তর দেননি। প্রস্তাবিত বেসরকারি রিফাইনারিতে বার্ষিক ফিনিশড গুডসের উৎপাদনের পরিমাণ কত হবে, এমন প্রশ্নে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ফাইল না দেখে বলা যাবে না। অফিসে এলে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
‘নিয়ম অনুযায়ী পেট্রোলিয়াম জ্বালানির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বিপিসির হাতে। বিপিসির পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ নেই। কেউ পূর্বানুমতি ছাড়া আমদানি করে থাকলে বিপিসি থেকে তারা কীভাবে অনুমোদন নেন, সেটা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সমালোচকরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট চলছে তাতে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় হবে—এমন একটি প্রকল্পের অর্থসংস্থানের বিষয়টি বিপিসির হাইপ্রোফাইল কমিটির প্রতিবেদনে না থাকা ‘দূরভিসন্ধিমূলক’। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রায় ১২শ কোটি টাকার মতো এরই মধ্যে খরচ করেও ইআরএল-২ প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রিফাইনারি করার অনুমতি দেওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের কোনো সরকার নতুন কোনো রিফাইনারি তৈরি করতে পারেনি। গত প্রায় ছয় দশক ধরে আমাদের ১৫ লাখ টন পরিশোধনের যে সক্ষমতা ছিল এখনো তা-ই রয়ে গেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য। সময় ও ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন প্ল্যান্টটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিবাচক হতে হবে। কারণ, সরকারি কর্মকর্তারা নিজেরা সুবিধা নিতে চান। তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন না এবং হতে পারবেন না বলেই ইআরএল-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
‘এজন্য নিজেদের প্ল্যান্ট করার আগে তারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে রিফাইনারি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন মাফিয়া গ্রুপকে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাতে দুদিকেই লাভ। একদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো ব্যবসা হবে, তার (লাভের) একটি অংশ সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে যাবে’- বলেন এম শামসুল আলম।
সূত্রে জানা গেছে, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একটি প্রভাবশালী শিল্পগ্রুপকে সুবিধা দিতে ২০২৩ সালে ‘বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুত, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা-২০২৩’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এরপর ওই শিল্পগ্রুপটি নতুন রিফাইনারি করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে আবেদনও করে।
কিন্তু সরকার পতনের পর ওই শিল্পগ্রুপটি তাদের রিফাইনারি নিয়ে এগোতে না পারলেও নতুন করে ১৫ লাখ টনের রিফাইনারি নির্মাণ এবং উৎপাদিত পণ্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিপণনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সাল থেকে সিআরইউ (ক্যাটালিস্ট রিফরমিং ইউনিট) প্ল্যান্টে ন্যাফতা ও কনডেনসেট প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এলপিজি, পেট্রোল, অকটেনসহ নানান পেট্রোলিয়াম উপজাত উৎপাদন করে। এরমধ্যে পেট্রোল ও অকটেন নিয়ম অনুযায়ী বিপিসির কাছে বিক্রি করে।
বিপিসির প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, টি কে গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসপিএলের বার্ষিক সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টনের ন্যাফতা ও কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যাট বর্তমানে চালু রয়েছে। চলতি বছর এসপিএল দৈনিক ১০ হাজার ব্যারেল প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কনডেনসেট/ক্রুড রিফাইনিং ইউনিট এবং ৩৫ হাজার ব্যারেল প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি ক্রুড রিফাইনিং ইউনিট কমিশনিং করার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্মিতব্য প্ল্যান্টটির বার্ষিক প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা প্রায় ১৯ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে কমিটির আহ্বায়ক জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘নতুন রিফাইনারি করার আবেদনটি অন্তর্বর্তী সরকারের। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে গিয়েছে। এখনো প্রাথমিক অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়।’
প্রতিবেদনে প্ল্যান্ট কমিশনিং করার সম্ভাব্য যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো প্রকল্পের ল্যান্ড ডেভেলপ চলছে। বিপিসি এখনো প্রাথমিক অনুমোদনও দেয়নি।’
কিছু যন্ত্রাংশ আমদানির এলসি (ঋণপত্র) করা হয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসাইন আরও বলেন, ‘তারা (এসপিএল) বলছে কিছু এলসি করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির কোনো অনুমতিপত্র তাদের (এসপিএল) হাতে নেই। অনুমতি ছাড়া তারা কোনো প্ল্যান্ট বসাতে পারবে না।’ প্রতিবেদনটি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কোনো মহলের চাপ ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

গত দুই মাসে বিপিসির ওই কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির দুজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। স্বাক্ষরের পর প্রতিবেদনের কোনো কপি দেওয়া হয়নি। কপি শুধু আহ্বায়কের কাছে রয়েছে।’
অন্য একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা আগের সিআরইউ প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেছি। আমাদের দেশে আসলে কেউ নীতিমালা মানেন না। আগের অনেক সিআরইউ কিংবা লুব ব্লান্ডিং প্ল্যান্ট আছে, যারা আগে প্ল্যান্ট নিজেদের মতো তৈরি করার পরই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পেট্রোলিয়াম জ্বালানির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বিপিসির হাতে। বিপিসির পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ নেই। কেউ পূর্বানুমতি ছাড়া আমদানি করে থাকলে বিপিসি থেকে তারা কীভাবে অনুমোদন নেন, সেটা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন।’
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে বার্ষিক ১৫ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতার একটি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। এ পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির প্রায় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারির সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি-২ প্রকল্পের নতুন প্রস্তাবনায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সেটি বার্ষিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতার রিফাইনারি। সে হিসাবে ১৫ লাখ টন উৎপাদন ক্ষমতার রিফাইনারি করতে হলে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।
‘এ টাকার বেশিরভাগই যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আমদানি এবং বিশেষজ্ঞ নিয়োগে ব্যয় হবে। এ ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই ফরেন কারেন্সিতে (বৈদেশিক মুদ্রা) পরিশোধ করতে হবে’- বলেন ওই কর্মকর্তা।
আবেদিত প্রকল্পের বিষয়ে কথা হয় টি কে গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসক ও করপোরেট) হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিপিসি ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন রিফাইনারিতে কত টাকা বিনিয়োগ হবে সেটি আমি জানি না।’ পরে কথা হলে সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী প্রণব সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত রিফাইনারিতে কত টাকা বিনিয়োগ হবে সেটি আমার এ মুহূর্তে জানা নেই। তবে প্রজেক্ট প্রোফাইলে এসব উল্লেখ আছে।’
তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পে বিনিয়োগকারী হিসেবে আমাদের কোনো পার্টনার নেই। তবে দেশীয় বা ইন্টারন্যাশনাল সোর্স থেকে লোন থাকতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে গত কয়েকদিনে একাধিকবার ফোনকল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হয়। এসব বার্তা তিনি সিন করলেও কোনো সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে সুপার পেট্রোকেমিক্যালের ১৫ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার একটি রিফাইনারি বিষয়ে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। বিপিসি থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’
প্রতিবেদনে প্রকল্পে বিনিয়োগ, সম্ভাব্য প্রকল্প ব্যয়ের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে কোনো দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই সে বিষয়গুলো আলোচনায় আসা দরকার। আলোচনা হলে দুর্বলতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের সুবিধা হবে।’