আর্কাইভ  শনিবার ● ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ২২ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম

নিত্যপণ্যের চড়া দাম
স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিএনপি

♦ অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে
♦ জিরো টলারেন্স নীতি দলীয় হাইকমান্ডের
শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিএনপি

খাদের কিনারে পর্যটন খাত

খাদের কিনারে পর্যটন খাত

সোনালি যুগের চলচ্চিত্রনির্মাতা - ছটকু আহমেদ

শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ০২:১৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ছটকু আহমেদ, নাম আসলে সৈয়দ উদ্দিন আহমেদ। সরকারি চাকরি করে দুটি কাজ করা যায় না, তাই নাম বদলাতে হবে। বাবা আদর করে ছোটকা বলে ডাকতেন। প্রথম প্রথম ছোটকা আহমেদ নাম নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিন্তু ভালো শোনাচ্ছিল না। শেষে অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম ছোটকাকে ছটকু করে দিলে বেশ জুতসই হলো। আর সেই নাম নিয়েই তিনি গত প্রায় ছয় দশক ধরে চলচ্চিত্র জগৎ মাত করে চলেছেন। হয়ে উঠেছেন খ্যাতিমান, পেয়েছেন যশ ও সম্মান। চলচ্চিত্রে ছটকু আহমেদের আগমন একেবারেই হঠাৎ করে তা বলা যাবে না। ষাটের দশকে নারায়ণগঞ্জে যখন তার যুবকবেলা কাটছিল, তখনই তিনি মঞ্চনাটক, গীতি আলেখ্য তথা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। বাহাত্তর সালে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রটি করতে ঋত্বিক ঘটক বাংলাদেশে আসেন। তখন ছটকু আহমেদ ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়াপদা ইরিগেশনের সেকশন অফিসার।

 

তাঁর নারায়ণগঞ্জের বন্ধু হাবিবুর রহমান খান ‘তিতাস’-এর প্রযোজক ছিলেন। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে খবর পাঠালেন, ‘ঋত্বিকের সহকারী হবে কি না তুমি?’ ছটকু ভাবলেন, এ সুযোগ তো বারবার আসবে না। তিনি চাকরি রেখে চলে এলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। একটা লঞ্চ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। পাত্র-পাত্রী ও সহকারীরা সেটিতে চড়ে শুটিং করতেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ কিছুদিন শুটিং ছটকু আহমেদটিমের সঙ্গে থেকে ছটকু আবার ফিরলেন চাকরিতে। কিছুদিন পরে ‘তিতাস’ মুক্তি পেল। নাম, সুনাম, যশ, খ্যাতি পেলেন। ততদিনে ছটকু আহমেদ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পে বদলি হয়ে এসেছেন। একদিন হাবিবুর রহমান বললেন, ‘চল আড্ডা মারতে মারতে ছবি বানাব।’ ছটকু আহমেদ বললেন, ‘কী রকম?’ হাবিবুর রহমান বুঝিয়ে বললেন, ‘আমরা শাওন-সাগর [হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে] নামে একটা প্রতিষ্ঠান বানাব। আড্ডা মারতে মারতে কিছু টাকা জমাব। তারপর ছবি বানাব।’ এ জে মিন্টু, তমিজউদ্দিন রিজভী, আওলাদ হোসেন চাকলাদার, ফখরুল হাসান বৈরাগীসহ সাতজনকে নিয়ে গঠিত হলো শাওন-সাগর লি.। ছটকু আহমেদের চিত্রনাট্যে ছবি নির্মাণ শুরু হলো। এ জে মিন্টু নির্মাণ করলেন ‘মিন্টু আমার নাম’। সুপার-ডুপার হিট হলো সে ছবি। এর চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন ছটকু আহমেদ। সেটিই তাঁর প্রথম চিত্রনাট্য। এ জে মিন্টুর পরে রিজভীর ডিরেক্টর হওয়ার পালা। কিন্তু সবাই বলল, মিন্টুর ছবি হিট হচ্ছে, ও আরেকটা ছবি করুক। পরে তিনি করলেন ‘প্রতিজ্ঞা’ এবং সেটিও সুপার-ডুপার হিট। ছটকু আহমেদের প্রথম দুটি স্ক্রিপ্টই সুপার হিট। তাঁকে নিয়ে ফিল্মপাড়ায় টানাটানি পড়ে গেল। সবাই বলে, চলে আসেন। কিন্তু তখন তার নিজেরই সাগর-শাওনে ডিরেক্টর হওয়ার পালা। ১৯৮২ সালে রাজ্জাক-ববিতাকে নিয়ে বানালেন ‘নাতবৌ’। এটি ছিল একটি ফ্যামিলি ছবি। ভালোই ব্যবসা করল ছবিটি। ছটকু আহমেদের মতে, ‘সংলাপই ছবির আশি ভাগ, নাচ-গান বাকি ২০ ভাগ। ভালো ভালো সংলাপে ছবি হিট হয়। যে ছবির গল্প মানুষ বলে আনন্দ পায়, সে ছবির প্রচার তত বেশি হয়, দর্শকও বেশি আসে।’ প্রায় দু ডজন ছবি নির্মাণ করেন ছটকু আহমেদ। পরিচালনার চেয়ে চিত্রনাট্য লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস, ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারসহ অজস্র সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এ গুণী নির্মাতা। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তাঁর বহুল আলোচিত ছবি সালমান শাহ অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। সালমান মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, আর এ ছবিটি মুক্তি পায় এর পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর।

 

 

এটি ছিল সালমান অভিনীত সবচেয়ে বড় মাপের হিট ছবি। আজও এ ছবির কথা ভুলতে পারেননি দর্শক। ছটকু আহমেদ বলেন, ‘সালমান শাহ একজন জাত অভিনেতা ছিলেন। তিনি অভিনয় নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতেন। তাঁকে কোনো সিকোয়েন্স বা ড্রেসের ব্যাপারে বুঝিয়ে দিতে হতো না। তিনি নিজের থেকেই পারফেক্টলি সব করে নিতে পারতেন। নির্মাতাদের অসম্ভব সম্মান করতেন। নায়করাজের পর এমন মেধাবী শিল্পী ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প আর পায়নি। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা অকালেই এমন একটি রত্ন হারিয়ে ফেলেছি।’ এফডিসির ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট সিনিয়র ইয়াংমেন’ ছটকু আহমেদ। ধোপদুরস্ত পোশাক পরে দৃপ্ত পদক্ষেপে আশি ঊর্ধ্ব বয়সেও ঢাকার এমাথা-ওমাথা চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি একাধারে নির্মাতা এবং কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা। তিন শতাধিকেরও বেশি চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন তিনি। এখনো নির্মাণে সক্রিয় তারকা নির্মাতা ছটকু আহমেদ। 

মন্তব্য করুন


Link copied