নিউজ ডেস্ক: ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন তলানিতে ঠেকেছে, কিন্তু রপ্তানি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা এই দুরবস্থা দেখে হতবাক হলেও, ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানিকারকেরা বলছেন—এর পেছনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে বাংলাদেশের হাত থেকে। একসময় যে বাংলাদেশ ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল, সেই দেশই এখন আত্মনির্ভরশীলতার পথে হাঁটছে এবং পাকিস্তান, চীনের মতো বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ কিনছে। ফলে ভারতের বহুদিনের পেঁয়াজ বাজার হারানোর মুখে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতে বলা হয়, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই যেত বাংলাদেশে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ একাই ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ কিনেছিল ভারত থেকে—যা ভারতের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ কিনেছে ঢাকা। অর্থাৎ আমদানি কমেছে প্রায় ৯৮ শতাংশ!
রপ্তানিকারকদের মতে, ভারত নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বারবার পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে নয়াদিল্লি। ২০২৩-এর আগস্ট থেকে ২০২৫-এর এপ্রিল পর্যন্ত তো নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চলেছেই। এর ফলে যখনই ভারত বাজার থেকে সরে গেছে, তখনই ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। বাংলাদেশ ২০২০ সালে এই নীতির অস্থিরতার জন্য ভারতকে কূটনৈতিক নোটও পাঠিয়েছিল। এখন তারা স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষা ও উৎপাদন বাড়াতে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, আরও বড় ধাক্কা—ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ বেআইনিভাবে রপ্তানি হয়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, চীনে পৌঁছাচ্ছে। সেই বীজ দিয়েই প্রতিবেশীরা নিজেদের পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ফলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্রেতারা আর ভারতের দিকে তাকাচ্ছে না।
হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এইচপিইএ) সাবেক প্রধান অজিত শাহ বলেছেন, ‘আমরা গুণমানের জন্য প্রিমিয়াম দাম নিতে পারতাম। কিন্তু যখন আমরা বাজারে ছিলাম না, তখন ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। এখন তারা আর গুণমান দেখে না, দামের তুলনা করে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয়, সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছে না। ২০২০-২১ সালে সৌদিতে ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ গিয়েছিল, এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ২২৩ টন। সৌদি ব্যবসায়ীরা এখন ইয়েমেন, ইরান ও স্থানীয় উৎপাদন থেকে সস্তায় পেঁয়াজ পাচ্ছেন। ফিলিপাইনসও চীনের পরেই ভারতের কথা ভাবে।
রপ্তানিকারকেরা এখন সরকারের কাছে আবদার করছেন, পেঁয়াজের বীজ রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক। এইচপিইএর সহসভাপতি বিকাশ সিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো আমাদের বীজ দিয়েই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এটা ভারতীয় কৃষকদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।’
যে বাংলাদেশ একসময় ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া চলতে পারত না, সেই বাংলাদেশই আজ ভারতীয় রপ্তানিকারকদের চোখে জল এনে দিচ্ছে। নিজের নীতির ফাঁদে পড়ে ভারত এখন নিজের সবচেয়ে বড় বাজারটিই হারাতে বসেছে।