পাবর্তীপুর, প্রতিনিধিঃ দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এ কাটারিভোগ সুগন্ধি চাল। পার্বতীপুর উপজেলায় সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাতাসে সুগন্ধি ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারদিক। বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলবেন কৃষকরা। এবার উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
৫১ হাজার মেট্রিক টন কাটারিভোগ সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধানের ফলন হয়েছে। সুগন্ধি চাল হবে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। মেসার্স বাদল ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী ও সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পার্বতীপুরের পুরাতন বাজারে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার নিয়মিত হাট বসে। পার্বতীপুর পৌর সভা কৃষকদের সুবিধার্থে সপ্তাহের দুদিন রবিবার ও বুধবার এই হাটে সুগন্ধি ধান কেনা-বেচার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সুগন্ধি ধান কেনা-বেচা শুরু হবে। চলবে আগামী ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত। এই হাটে সুগন্ধি ধানের প্রধান ক্রেতা প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার, এসিআই, সিটি গ্রুপ, রুপঁচাদা, ইশান এগ্রো, ইরফান, ইফাদ ও নবাব অটোসহ অন্যান্য অটোরাইস মিল। সুগন্ধি ধানের চাল প্যাকেটজাত করে দেশের ভিতরে ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের হামিদপুর, বেলাইচন্ডি, রামপুর, মন্মথপুর, পলাশবাড়ী ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের কাটারিভোগ সুগন্ধি ধান বেশি চাষ হয়েছে। ধানের দাম ভালো থাকায় এ বছর ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ হয়েছে। মোটা এবং মাঝারি জাতের ধান ১৫ হাজার ২৩২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ তৎপর থাকায় রোগবালাই নেই বললেই চলে তাই ফলনও ভালো হয়েছে বলে দাবি করছে। এ উপজেলার পাশাপাশি দিনাজপুর সদর, বিরল, ফুলবাড়ী ও চিরিরবন্দরসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। এঅঞ্চলে চিনি কাটারি, জিরা ৩৪, জিরা কাটারি, জটা কাটারি, কাটারিভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, কালো জিরা, চল্লিশ জিরাসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। এই চাল দেখতে সরু ও লম্বা। এসব সুগন্ধি ধান এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ও বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।
৩নম্বর রামপুর ইউনিয়নের বৃত্তিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আকরাম হোসেন জানান, এবার ২ বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ করেছেন। তবে, খরচ বেশি। জমিতে ৬-৭ বার স্প্রে করতে হয়েছে। এবার কারেন্ট পোকা অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।১ নম্বর বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান রুবেল বলেন, এবার ৮ বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ করেছেন। ধানের ফলন ভালো। তবে, সার, কীটনাশক ও ধান কাটা শ্রমিকের দামও বেশি। দাম ভালো না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
এ ব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজিব হুসাইন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাটারিভোট সুগন্ধি ধান কেটে ঘরে তুলবেন কৃষকরা। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের বারংবার বলার পরেও তারা চাষ করছে। কারন হিসেবে এই ধান চাষাবাদ করলে অন্যান্য ফসল চাষ করতে পারে না। তাই কৃষকদের সুগন্ধি ধান চাষ কমাতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তবে, এ বছর সুগন্ধি ধানের ভালো ফলন হয়েছে।