আর্কাইভ  রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রংপুরে ৩ মাসে ১৩ খুন, ধর্ষণ ৩৭

রংপুরে ৩ মাসে ১৩ খুন, ধর্ষণ ৩৭

রাজনীতির ‘হার্টবিট’ এখন এভারকেয়ার

রাজনীতির ‘হার্টবিট’ এখন এভারকেয়ার

সুদানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ

সুদানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ

হাদির ওপর হামলাকারী ভারতে পালিয়ে গেছেন

সায়েরের চাঞ্চল্যকর তথ্য
হাদির ওপর হামলাকারী ভারতে পালিয়ে গেছেন

বেরোবিতে ”বাংলাদেশে ছররা গুলি নিষিদ্ধ কেনো প্রয়োজন” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১০:১০

Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সপ্রান (সকল প্রাণের নিরাপত্তা) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (OHCHR) এর যৌথ আয়োজনে "প্রাণঘাতী ছররা গুলি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বল প্রয়োগঃ বাংলাদেশে ছররা গুলি নিষিদ্ধ কেনো প্রয়োজন" শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
 
আজ শনিবার (১৩ই ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায়  কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভার্চুয়াল রুমে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 
 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী। এছাড়া প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন, ছররা গুলির ভুক্তভোগী তৌহিদুল হক সিয়াম, আর্মি মেডিকেল কলেজ রংপুরের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সামাদ, এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ সিফাত রুমানা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের
 (OHCHR) হিউম্যান রাইটস অফিসার জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে এ সেমিনার আয়োজিত হয়।
 
সেমিনারে ‘সপ্রান’-এর পক্ষ থেকে "ডেডলি ইন ডিসগাইজঃ দ্য ইউজ অফ প্যালেট গানস এগেইন্টস সিভিলিয়ান ডুরিং দ্য জুলাই-আগস্ট ২০২৪ আপরাইজিং ইন বাংলাদেশ" (Deadly in Disguise: The Use of Pellet Guns Against Civilians During the July-August 2024 Uprising in Bangladesh) শীর্ষক গবেষণাপত্রের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। গবেষণায় উঠে আসে যে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং রাজনৈতিক দমনের হাতিয়ার হিসেবে ছররা গুলি ব্যবহার করেছে। এসময় ছররা গুলির আঘাতে দেশজুড়ে অন্তত ৭৩৬ জন চোখে আঘাত পেয়েছেন এবং অন্তত ১৫০ জন চিরস্থায়ীভাবে অন্ধত্ব বরণ করেছেন। সপ্রানের গবেষক জেবা সাজিদা সারাফ গবেষণার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
তিনি ছররা গুলির বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপি ইতিহাস তুলে ধরে এর প্রাণঘাতি দিক তুলে ধরেন।  সপ্রাণের গবেষণায় উঠে আসা জুলাই আন্দোলনে ছররা গুলিতে আহত, ফ্রন্টলাইন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসকদের বক্তব্য থেকে দেখান যে এ গুলির ব্যবহার আন্দোলন দমনে কম প্রাণঘাতি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক
আইনে ছররা গুলি সংক্রান্ত বিধান তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশে নিষিদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা
করেন।
 
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ছররা গুলিকে ‘কম-প্রাণঘাতী’ (less-lethal) বলা হলেও বাস্তবে এটি প্রাণঘাতী এবং এর ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার কনভেনশনগুলোর  সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষ করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আলোচনায় উঠে আসে, যাকে পুলিশ মাত্র ১৪-১৫ মিটার দূর থেকে গুলি করে হত্যা করেছিল এবং তার শরীরে ৯০টিরও বেশি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছিল।
 
সেমিনারে প্রধান অতিথি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী আবু সাইদকে স্মরণ করে গণ অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করেন। তরুণদের আত্ম্যত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন আমরা ছররা গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র চাই না। আমরা চাই, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব।
 
শহীদ আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন তাঁর ভাই আবু সাইদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ছররা গুলির ভয়াবহতা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছররা গুলি নিষিদ্ধেরও দাবি জানান।
 
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (OHCHR) এর হিউম্যান রাইটস অফিসার জাহিদ হোসেন  মানবাধিকার নিয়ে ধারণা দেন। এর পাশাপাশি রাষ্ট্র আন্দোলন দমনে কতটুকু বল প্রয়োগ করতে পারে এবং ছররা গুলি সংক্রান্ত
জাতিসংঘের নীতিমালা তুলে ধরেন।
 
ছররা গুলির নির্মম শিকার ও ভুক্তভোগী তৌহিদুল হক সিয়াম তার অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলেন, “আমার মাথা ও হাতে অসংখ্য ছররা গুলি রয়ে গেছে। ডাক্তাররা বলেছেন, মাথা থেকে এ ধাতব পিলেটগুলো বের করতে গেলে আমার বাঁচানো যাবে না। মাথার যে পাশে ছররা গুলিগুলো আটকে আছে, সেদিকটায় প্রায়ই তীব্র ব্যথা হয়। একটু পরিশ্রম করলেই বা সামান্য চিন্তা করলেই এই ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ছররা গুলি হয়তো আমাকে সেদিন মেরে ফেলতে পারেনি, কিন্তু প্রতিদিন
ধীরে ধীরে আমাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়—এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে সেদিন যদি আমাকে একেবারে গুলি করে মেরেই ফেলা হতো, তাহলে হয়তো ভালো হতো। 
 
 
 
ডা. মো. আব্দুস সামাদ বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র ,তাঁর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য
এবং ভয়াবহতা  নিয়ে আলোচনা করেন। ছররা গুলি প্রাণঘাতী
নয় বলে প্রচলিত মত তিনি ফরেনসিক আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি এ প্রসঙ্গে আবু সাঈদের
ছররা গুইর আঘাতে শহীদ হওয়ার ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেন।
 
 
 
 ড. মোসাম্মৎ সিফাত রুমানা আবু সাঈদের
কথা তুলে ধরে বলেন, শুধু ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নয়, ২০১৮ এর  আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। অভ্যুত্থান সময়ে তিনি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং এই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। 
 
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ত্বহা হুসাইন। সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন , তার বিভাগে হিউম্যান রাইটস কোর্সটি মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ানো হয়। সপ্রাণ-এর এই গবেষণাটি বিভাগের তাত্ত্বিক আলোচনার পাশাপাশি একটি প্রায়োগিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
 
 
সমাপনি বক্তব্যে সপ্রানের রিসার্চ ডিরেক্টর মোঃ জারিফ রহমান রাষ্ট্রের
আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি  ছররা গুলি নিষিদ্ধের পাশাপাশি অস্ত্র ক্রয়ের  ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবী দানান। 
 
 
অনুষ্ঠানে সপ্রান-এর পক্ষ থেকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ছররা গুলির ব্যবহার
নিষিদ্ধকরণ, ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন, এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য সুনির্দিষ্ট
সুপারিশ পেশ করা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকরা এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা তুলে ধরেন।
সপ্রানের গবেষক অপ্সরা ইসলাম তন্দ্রা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

মন্তব্য করুন


Link copied