স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ আদালত হাজতখানা। যেখানে রাখা হয় বিচারকার্য চলাকালে কারাগার থেকে আদালতে আনা আসামীদের। এসব হাজতখানায় মেঝেতে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে সময় কাটাতে হয় হাজতিদের। কিন্তু শীতে খালি পায়ে ওই মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা বসায় অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। আসামীদের এমন কষ্টে লাঘবে মানবিকতার হাত বাড়িয়েছেন নীলফামারী জজ আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক ( যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. মতিউর রহমান।
আজ মঙ্গলবার(৩১ জানুয়ারী) দুপুরে নিজস্ব অর্থায়নে আদালত হাজতখানায় মেঝেতে বিছিয়ে দিলেন কার্পেট। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাবলিক প্রসিকিউটর অক্ষয় কুমার রায়।
কার্পেট বিছানোর পর ওই হাজতখানায় অবস্থানরত কয়েদিরা স্বস্তি প্রকাশ করেন। এসময় তারা বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শীতের কারণে খালি মেঝেতে বসে থাকা যায় না। এখন এখানে আগত আসামীরা কার্পেটে বসে স্বস্তিতে সময়টুকু কাটাতে পারবেন।
সেখানে কথা হয় মাদক মামলায় বিচারাধীন এক আসামীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আসামী বলেন, শীতে খালি মেঝেতে ঠান্ডা লাগে। বসা যায়না, দাঁড়িয়েও থাকা যায় না। ঘন্টার পর ঘন্টা অস্বস্তিতে কাটে আমাদের। কর্পেট দেওয়ায় হাজতখানায় আগতরা স্বস্তিতে সময় কাটাতে পারবেন, নামাজও পড়তে পারবেন।
জমি-জমা সংক্রান্ত মামলায় নীলফামারী কারাগারে আটক আছেন লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মহেন্দ্র দাস (৩৫)। তিনি বলেন, শীতের মধ্যে কারাগার থেকে চার বার আদালত হাজতখানায় আনা হয়েছে আমাকে। প্রচন্ড ঠান্ডায় মেঝের মধ্যে বসাতো দূরের কথা দাঁড়িয়েও থাকা দায়। কার্পেট দেওয়ার পর একটি ভালো কাজ হলো। এখানে আগত আসামীরা স্বাচ্ছন্দে সময় কাটাতে পারবেন। মানবিক একজন স্যার আমাদের সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন। এজন্য আমরা অনেক খুশি।
হাজতখানায় কর্তব্যরত আদালত পুলিশের এটিএসআই আব্দুর রউফ বলেন, আমি প্রায় এক বছর ধরে এখানে দ্বায়িত্ব পালন করছি। আসামীদের বসার জন্য হাজতখানার ভেতরে টাইলস দিয়ে বেঞ্চের মত করা আছে। কিন্তু শীতের সময় মেঝে কিংবা ওই বেঞ্চে বসতে কষ্ট হয়। এখন এই কার্পেটে বসতে সমস্যা হবে না। চাইলে সেখানে বসে আসামীরা নামাজও আদায় করতে পারবেন।
নীলফামারী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অক্ষয় কুমার রায় বলেন, আসামীদের হাজতখানায় অবস্থানের সময় তারা যে কষ্ট ভোগ করেন সেটি লাঘবে একজন বিচারকের এমন উদ্যেগ প্রশংসার দাবি রাখে। এর আগেও তিনি অন্য জেলায় দ্বায়িত্ব পালনকালে এজলাসের কাঠগড়ায় কার্পেট এবং হাজতখানায় লাইব্রেরী করে প্রসংশিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে নীলফামারী জজ আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক ( যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. মতিউর রহমান বলেন, সকালে আমি আদালতে প্রবেশের সময় দেখি জেলখানা থেকে নিয়ে আসা আসামীরা হাজতখানায় দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম তারা ঠান্ডার কারণে মেঝেতে বা ওই বেঞ্চে বসতে পারছেন না। দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট দেখে আমি বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল করিম স্যারের সঙ্গে কথা বলি। তিনি সম্মতি দিলে আমি আমার নিজস্ব অর্থায়নে একটি কার্পেট কিনে বিছিয়ে দিলাম। আশা করি এতে কিছুটা হলেও বিচারাধীন মামলার আসামীদের কষ্ট লাঘব হবে। তিনি আরও বলেন, আজকে সেখানে বাথরুমে যাওয়ার জন্য দুই জোড়া স্যান্ডেল কিনে দিব। আগামীতে আমি সেখানে আসামীদের পড়ার জন্য একটি লাইব্রেরী এবং হাত ধোওয়ার জন্য বেসিন করে দিব।