আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের ডাকা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই দিনভর অচল হয়ে পড়েছিল দেশের রেলপথ, সড়ক ও মহাসড়ক। সারা দেশের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । কমপক্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধে অংশ নেন।

সেদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে অবরোধ কর্মসূচি। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শাহবাগকে কেন্দ্র করে চলে এ কর্মসূচি। আন্দোলনকারীরা দাবি জানান, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করে তা সংসদে আইন হিসেবে পাস করতে হবে। একই সঙ্গে তারা ঘোষণা দেন, ১১ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সারা দেশে আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঢাকার ১৮ স্থানে অবরোধ, অচল রাজধানী

রাজধানীর অন্তত ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা সেদিন অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে মিছিল শুরু করে বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, পরীবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এতে মগবাজার, মৌচাক, হাতিরঝিল, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, সংসদ ভবন, নিউ মার্কেট, মিরপুর রোড এবং শান্তিনগর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট অংশে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে এক্সপ্রেসওয়েতেও যান চলাচল বন্ধ ছিল। কারওয়ান বাজার রেললাইনেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন, ফলে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সায়েন্সল্যাব মোড়, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, বকশীবাজার, মহাখালী ও রামপুরায় অবরোধের ফলে ঢাকার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সারা দেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ

ঢাকার বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী, ঢাকা-আরিচার সাভার, ঢাকা-খুলনার গোপালগঞ্জ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, পাবনা, দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও পটুয়াখালীসহ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের একাধিক স্থানে শিক্ষার্থীরা অবরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিএম কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বহু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দিনভর অবরোধে অংশ নেন।

পটুয়াখালীতে পায়রা সেতুর টোলপ্লাজা, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুরের মাটিখোলা এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।

রেল যোগাযোগ ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল

সেদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ সাতটি স্থানে রেলপথ অবরোধ করা হয়। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও রেলপথ অবরোধ করা হয়। এতে তিস্তা এক্সপ্রেস প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে থাকে। ডুয়েটের শিক্ষার্থীরা গাজীপুরে এক ঘণ্টার জন্য রেলপথ বন্ধ করে রাখেন।

সন্ধ্যার পর কিছু অবরোধ প্রত্যাহার

১০ জুলাই সন্ধ্যা নাগাদ কিছু জায়গায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় রাত পৌনে ৮টার দিকে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৭টায় জিরো পয়েন্ট ছাড়েন।

উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ

সরকারি চাকরির ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ দেয়। এতে কোটাব্যবস্থা পূর্বাবস্থায় থেকে যায় অর্থাৎ ওই পাঁচটি গ্রেডে কোটা থাকবে না। আদালত আশা প্রকাশ করে, শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে এবং আন্দোলনের বক্তব্য আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করবে।

আন্দোলনের নতুন ঘোষণা

আন্দোলনের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদ ও সারজিস আলম ১০ জুলাই শাহবাগের সমাবেশে জানান, সরকারের কাছে তাদের একমাত্র দাবি—সব গ্রেডে কোটা বাতিল করে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটার সীমা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। তারা আবারও ঘোষণা দেন, ১১ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সারা দেশে নতুন করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হবে।

সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, সরকারের কাছে। আদালত পরিপত্র নিয়ে কাজ করছে কিন্তু পরিপত্র বাতিল বা জারি করার একমাত্র অধিকার সরকারের।’

মন্তব্য করুন


Link copied