আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়: যে কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস রাখতে পারি

সোমবার, ২ মে ২০২২, দুপুর ০৪:৪৬

আব্দুল মজিদ
চরম এক সংকটময় সময়  অতিক্রম করছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা । ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটি কখনো এতাটা দুরবস্থায় পড়েনি । এক সময় সামাজিক সূচকে শ্রীলঙ্কা ছিল এ অঞ্চলের সেরা । শিক্ষা ও চিকিৎসায় ছিল  দক্ষিণ এশিয়ার সবার তুলনায় এগিয়ে । পোশাক খাত দক্ষিন এশিয়ার প্রথম ঢুকেছিল শ্রীলঙ্কাতেই ।  পর্যটকদেরও পছন্দের জায়গা ছিল  শ্রীলঙ্কা । কিন্তু গৃহযুদ্ধ, করোনা মহামারী আর সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত ২১ দশমিক ৯২ মিলিয়নের  দেশটাকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে  এসেছে ।  

শ্রীলঙ্কার যেভাবে সংকটের শুরু: ২০০৬ সালে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর শ্রীলঙ্কার মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ২০১২ সাল পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল এবং সে সময় দেশটির মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৩৬ ডলার থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৮১৯ ডলার হয় , যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ব্বোচ্চ । এছাড়াও দেশটি সেই সময়  ২০১৯ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে চলে যায় । কিন্তু বর্তমান সংকটের শুরু হয়  ২০১২ সালের পর থেকে, যখন সরকার একের পর এক অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প( যা অধিকাংশই লাভজনক হয়ে উঠতে পারে নি)  হাতে নেয় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে বৈদেশিক  ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ।  এছাড়াও ২০১৯ সালে নির্বাচনী প্রচারনায় রাজাপাকসের সরকার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য কর হ্রাস করে ১৫ থেকে ৮ শতাংশে নিয়ে আসে।  ফলে নির্বাচনে তারা জয়ী হলেও  সরকারের আয় অনেকাংশই কমে আসে । এর পর কোভিড মহামারি তাদের পর্যটন শিল্পে ধস নেমে আসে । শ্রীলঙ্কা তার জিডিপির ১৩ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে ।  ২০১৯ সালে পর্যটন খাত থেকে শ্রীলঙ্কার আয় ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার যা ২০২১ সালে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে । শ্রীলঙ্কা আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় গত দু বছরের মধ্যে তাদের রিজাভর্  ৭০ শতাংশ কমে যায় । 

শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা :  শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে । বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে যাওয়ায় খাদ্য, জ্বালানী ও ঔষধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না । শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি সরকারী হিসেবে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ  এবং খাদ্যদ্রব্যে তা ৩০ শতাংশ । তবে বেসরকারী হিসেবে মূল্যস্ফীতি ৫৫ শতাংশের বেশি । গত মার্চ মাসে পর্যন্ত চালের(শ্রীলঙ্কাদের প্রধান খাদ্য) দাম বেড়েছে ৯৩ শতাংশ, মুরগির দাম বেড়েছে ৫৫ শতাংশ, ডালের দাম বেড়েছে ১১৭ শতাংশ  আর পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪৩.৫ শতাংশ ও ৪৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । 
শ্রীলঙ্কার এই বিপর্যয়ের কারণ : শ্রীলঙ্কার  এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে গত ১৫ বছরে দেশটির সরকারের নেয়া কিছু অপ্রযোজনীয়, অপরিকল্পিত , অলাভজনক, অতি ব্যয়বহুল  (শ্বেতহস্তী) মেগা প্রকল্প এবং সরকারের অদূরদর্শীসিদ্ধান্ত । এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তাসহ নানা ধরনের প্রকল্প  । এসব অধিকাংশ প্রকল্পই করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে । এছাড়া সরকার হঠাৎ কৃষিক্ষেত্রে অর্গানিক চলে যাওয়ায় ফলে কৃষি উৎপাদন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে আসছে  । 

যে কারণে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার হবে না : শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বাংলাদেশর অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন , “ বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না ’’ । জননেত্রীর এ কথার যৌক্তিকতা আমরা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক তুলনা করলে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারি :

  • শ্রীলঙ্কার মোট ঋণ ৩৩ বিলিয়ন ডলার । মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ , সে হিসেবে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ ১ হাজার ৬৫০ মার্কিন ডলার । অপরদিকে বাংলাদেশের মোট ঋণ ৪৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ হিসেবে মাথাপিছু ঋণ ২৯২.১১ ডলার । বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার মাতাপিছু ঋণ ৬ গুণ বেশি ।
  • শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ- জিডিপির অনুপাত ৬১ শতাংশের বেশি, সেখানে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের হার জিডিপির ১৩ শতাংশ ( আইএমএফের হিসেবে তা ৫০ শতাংশের উপরে  উঠলে বিপদজনক বলে ধরে হয়) ।
  •  শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশ চীন থেকে নেয়া, অপরদিকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৭ শতাংশ চীন থেকে নেয়া ।
  • শ্রীলঙ্কাকে প্রতি বছর ৭.৫ বিলিয়ন শোধ করতে হয় । অপরদিকে বাংলাদেশকে ২.৫ বিলিয়ন শোধ করতে হয় ।
  • শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশের  ক্ষেত্রে সুদের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ ।
  • বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সময় ৫ বছর হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা ৩০ বছর পর্যন্ত । এছাড়াও বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড থাকে, ফলে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ দীর্ঘ হয় ।
  • শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ ঋণ বাণিজ্যিক ও সার্বভৌম বন্ড ইস্যু থেকে নেয়া । সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন বাণিজ্যিক ও সাবভৌম বন্ড নেই । ঋণের বড় অংশই বহুপাক্ষিক সংস্থা থেকে নেয়া ।
  • মার্চ ২০২২ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রির্জাভের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশের রির্জাভ ৪৪.৪ বিলিয়ন ডলার । রির্জাভের পরিমাণ শ্রীলঙ্কার চেয়ে ২২ গুণ বেশি ।
  • শ্রীলঙ্কার রপ্তানী আয় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার । বাংলাদেশের রপ্তানি আয় শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৫ গুণ বেশি ।
  • বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৬.১৭ শতাংশ সেখানে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি এবং বাংলাদেশি টাকায় ১ ডলার সমান ৮৬.৪৫ টাকা আর শ্রীলঙ্কায় সেটা ১ ডলার সমান ৩২৬ রুপিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
  •  অর্গানিক  প্রক্রিয়া চালু করার ফলে শ্রীলঙ্কা কৃষিজ উৎপাদন কমেছে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি কিন্তু বাংলাদেশে ক্রমেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে ।

এ উল্লিখিত তথ্যে এটা স্পষ্ট যে, সব সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে এবং নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেসব মেগাপ্রকল্পেরে কাজ  চলছে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু পদ্মা সেতুই দেশের জিডিপিতে ১.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে (বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন) ।অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মেট্রো রেল প্রকল্প,রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প , বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অন্য প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে । তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ‘‘ যতদিন থাকবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ ”। 

লেখক: শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied