নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, অনন্য অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যিনি ব্যাট ও বলে সমানতালে জয় করে নিয়েছেন কোটি ভক্তের হৃদয়, সেই সাকিবকে আর কখনো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে দেওয়া হবে না বলেই জানিয়ে দিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) নির্দেশ দেওয়া হবে যেন সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলের হয়ে আর মাঠে নামতে না দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টানা বাকযুদ্ধের জেরে এ ঘোষণাই যেন সাকিবের ক্রিকেট অধ্যায়ে এক নতুন নাটকীয় মোড়।
বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে সোমবার, যখন সাকিব তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ইঙ্গিতপূর্ণ পাল্টাপাল্টি পোস্ট। আসিফ লেখেন, সাকিবকে 'পুনর্বাসন' না করার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। অপরদিকে সাকিব অভিযোগ তোলেন, আসিফই তাকে জাতীয় জার্সি গায়ে তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।
আসিফ বলেন, 'বাংলাদেশের পতাকা বহনের যোগ্যতা তিনি হারিয়েছেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার মতো অনুমতি তার নেই… সাকিব আল হাসান আর কোনোদিন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন না।'
এখানেই থেমে থাকেননি আসিফ। তিনি অভিযোগ করেন, সাকিব আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। যদিও সাকিবের দাবি, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল কেবল মাগুরার মানুষের সেবা করা।
১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাকিব বিদেশে অবস্থান করছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি আর দেশে ফেরেননি। এদিকে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, শেয়ারবাজারে জালিয়াতি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক অভিযোগও ঝুলে আছে।
এসব কারণেই তাকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই ওঠে না বলে মনে করেন আসিফ। তার ভাষায়, 'কেবল ভালো ক্রিকেটার বলেই কাউকে পুনর্বাসন করতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আইন সবার জন্য সমান।'
তবে সাকিব জন্মদিনের পোস্টকে তুচ্ছ করে দেখাতে গিয়ে বলেন, 'তিনি সবসময় ক্রিকেট মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। সেই জায়গা থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোতে কোনো অসঙ্গতি নেই। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।'
৩৮ বছর বয়সী সাকিবের রেকর্ড এখনো অনন্য, ১৪ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান, ৬৫০-এর বেশি উইকেট, আর ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৬ হাজার ওয়ানডে রান ও ৩০০ উইকেটের মালিকানা। তার ২০১৯ বিশ্বকাপ অভিযান এখনো টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি হিসেবে গণ্য হয়।
তবু সব কৃতিত্বের মাঝেই সাকিবের জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও বছরের শুরুতে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, নিজের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনো ভুল নেই, বরং উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সেবা করা। তার মতে, 'বড় পরিবর্তন কেবল ভেতর থেকে আনা সম্ভব। বাইরে থেকে সিস্টেম বদলানো যায় না।'
মূলত পরিকল্পনা ছিল ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে পূর্ণকালীনভাবে মনোনিবেশ করার। কিন্তু সাম্প্রতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে সেই পরিকল্পনা এখন অধরা স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে।