স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ মেয়ে শিশুর সব থেকে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিজের মতো জীবন যাপন করতে পারে না ওই শিশু। এখনো ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৫১ ভাগ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা, নজরদারি এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো গেলে দেশ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব।
“আমার গ্রাম আমার দায়িত্ব, শিশুর জীবন হোক বাল্যবিবাহ মুক্ত” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার(২৯ আগষ্ট) সকাল ১১টায় নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্তকরনের লক্ষ্যে বিশেষ সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ।
উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ওই বিশেষ সভার যৌথভাবে আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।
সভার সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য সাবেক সচিব সেলিম রেজা, কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) জেলা ও দায়রা জজ আশরাফুল আলম, কমিশনের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী আরফান আশিক, কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন ও এম.রবিউল ইসলাম, নীলফামারী পুলিশ সুপার গোলাম সবুর পিপিএম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেস বার্টলেট।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী, কিশোরীগঞ্জ ওয়ার্ল্ড ভিশনের এড়িয়া ম্যানেজার পিকিং চাম্বুগং। সভায় উপজেলার জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও সমাজসেবক সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা বাল্য বিবাহ মুক্ত গঠনে দীর্ঘদিন ধরে ৯টি ইউনিয়নে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ মাধ্যমিক ও মাদরাসা পর্যায়ের প্রধানদের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। যার ধারাবহিতকতায় গত এক বছরে দেখা যায় উপজেলার আট গ্রামে কোনো বাল্যবিয়ে হয়নি। মানুষকে সচেতন ও বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এই ফলাফল মিলেছে। বর্তমান সময়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অনুপ্রেরণামূলক যাত্রায় বাল্যবিয়ের হার এখন নিম্নগামী। আর বাল্যবিয়ের কুফল জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা শপথ নেয় লেখাপড়া শেষ না করে অল্প বয়সে তারা বিয়ে করবে না। অন্য কাউকেও করতে দেবে না।
সভায় জানানো হয়, উপজেলার ২০টি গ্রামের মধ্যে ১২টি গ্রামে তালিকাভুক্ত ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়ে শিশু রয়েছে এমন ৪ হাজার ৫৮৫টি পরিবারের মাঝে জরিপ করা হয়। সেই জরিপের ফলাফলে দেখা ৮টি গ্রামে বিগত ১ বছরে কোনো বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়নি। অবশিষ্ট ১২টি গ্রামে বাল্যবিয়ের হার ১০.৯৭ শতাংশ।
সুত্র মতে, উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি মাধ্যমিক ও মাদরাসায় বাল্যবিয়ে মুক্ত গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বাল্যবিয়ে মুক্ত সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় বাল্যবিয়ে বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপজেলায় অনেকাংশে বাল্যবিয়ে কমে এসেছে। বাল্যবিয়ের খবর পেলে তাৎক্ষণিক আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দিন দিন বাল্যবিয়ের হার কমেছে। জেলা প্রশাসক জানান, ২০১৪ সালের ৫ জুলাই এই উপজেলাকে দেশের প্রথম ভিক্ষকমুক্ত ঘোষনা করা হয়। যার মাধ্যমে উপজেলার ভিক্ষকরা আজ সকলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা আর ভিক্ষাবৃত্তি করেন না। আমারা আশা করি উপজেলা যখন ভিক্ষুক মুক্ত হয়েছে তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষনা করা যায় তার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।