আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪ ● ৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরের আলু যাচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে       গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও পোস্টমাস্টার!       চার ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক       ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন       রংপুরে মিস্টি ও সেমাই কারখানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা      

 width=
 

বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ এবং ২৬ মার্চ ও বাংলাদেশ এক সুতোই গাঁথা।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩, দুপুর ০১:০৬

শেখ মাজেদুল হক
 
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে  ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রোজ বুধবার জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর মাকে বলেন, ‘মা সায়েরা, তোর ছেলের এমন নাম রাখলাম যে নাম জগৎজোড়া খ্যাত হবে।’ পরবর্তীতে তার কথার প্রতিটি অক্ষর সত্য হয়েছে। শিশু থেকে দুরন্ত কৈশোর। মধুমতী নদীতে সাঁতার কেটে টগবগে যুবকে পরিণত হয় খোকা। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’। তার হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ সৃষ্টির মহানায়ক। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গি-পাড়ায়।১৯৩৮সালের ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী। 
পরিবারে ‘খোকা’ নামে পরিচিত ছেলে যে একদিন বিশ্বনন্দিত নেতা হবেন কিংবা স্বাধীনতায় নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা হবেন, তা কেউ হয়তো ভাবেননি। সেই তিনিই গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের জন্য জনগণ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে, পরে তাকে জাতির পিতার অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দেন। বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিটি বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শেকল ভাঙার মন্ত্র। এর ভেতর দিয়ে তিনি আবির্ভূত হন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক হিসেবে।
মার্চ মাস স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে এই মাসের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই মাসে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ এর ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। এই মাস এলে বাঙালি জাতি একটু বেশি আবেগপ্রবণ ও স্মৃতিকাতর হয়ে যায়। আবার সাহসের সঞ্চার ঘটে। এই মাসে ২৫ মার্চের কালো রাত্রির নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এই মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ ও এই মাসে। নারীর অধিকার সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এই মাসেই পালিত হয় বিশ্ব নারী দিবস। আমার মতে সবচেয়ে বেশি যে কারণে এই মাসকে আমরা স্মরণ করি তার মূল কারণ হলো এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন যেটিকে পরবর্তীতে ইউনেস্কো "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।বঙ্গবন্ধুর জন্ম, শৈশবকাল, স্কুল-কলেজ জীবন এবং সমগ্র জীবন ছিল আদর্শ এবং অনুকরণীয়। তাঁর সমগ্র জীবনকাল তিনি দেশ ও দেশের জণগণের জন্য ভেবেছেন। অন্যায় ও জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে লড়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণ দিতে বঙ্গবন্ধু সাধনা করেছেন। দেশের ও দেশের মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম এবং গঠনমূলক রাজনীতি করেছেন। বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
 গণতান্ত্রিক মূল্যচেতনা, শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা – এই ত্রিমাত্রিক বৈশিষ্ট্যই বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদের মূল কথা। জাতীয়তাবাদের এই মূলমন্ত্রকে তিনি সঞ্চারিত করে দিয়েছেন বাঙালির চেতনায়। এভাবেই, ইতিহাসের অনিবার্য দাবিতে, তিনি হয়ে উঠেছেন বাঙালির অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা।বাংলার জনগণকে ঘিরেই বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও কর্ম পরিচালিত হতো ।বিখ্যাত সাংবাদিক সিরিল ডন বলেন- হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা,যিনি রক্তে, বর্ণে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে ও জন্মসূত্রে পুরোদমে বাঙালি।

৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। … একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। … জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।
 
স্বনামধন্য লেখক আহমদ ছফা শেখ মুজিবুর রহমান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।’
❝আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দূর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি। ❞ - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুজিব ভাই  নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন বন্ধু, নেতাকর্মী সবার কাছে। ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবরণ করেন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাবার পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের এক বিশাল জনসভায় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এদিন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানালেন। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ একটানা নয় মাস চলে যুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন জাতির জনক। 
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন-
‘যেখানে ঘুমিয়ে আছো, শুয়ে থাকো বাঙালির মহান জনক তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ শৌর্য আর অমিত সাহস টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো তোমার সাহস নেবে নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।’ মার্চ মাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের ও অভ্যূদ্বয়ের মাস। পরিশেষে বলতে হয় বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ এবং ২৬ মার্চ ও বাংলাদেশ এক সুতোই গাঁথা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ্ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি হে ক্ষণজন্মা নেতা,
তোমার জন্যই পেয়েছি মোরা প্রাণের স্বাধীনতা।
তুমি না হলে বাংলাদেশ হতোনা হে চিরঞ্জীব নেতা,
তাই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সুতোই গাঁথা
অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত " জয় মুজিবুর রহমান " কবিতার বিখ্যাত চরণ - " যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান / ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান "।

তুমিই আমার বাংলাদেশ ,তুমিই আমার মানচিত্র ,তুমিই আমার লাল সবুজ পতাকা ,তুমি জন্মেছিলে বলেই চিৎকার করে বলতে পারি “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’’ । মিথ্যার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে অন্যায়ের বিপক্ষে লড়ে যাওয়া তোমার আদর্শ থেকেই শিক্ষা নিয়েছি । কালের আবর্তে শেখ পরিবারের আদরের ছোট খোকা একদিন হয়ে উঠলেন বিশ্বনন্দিত নেতা । একটি নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা। ফিদেল কাস্ত্রোর হিমালয় না দেখার আক্ষেপ মিটেছে যেই মুজিবকে দেখে ।অন্নদাশঙ্কর রায় গৌরি-যমুনার বিশালতায় মিলিয়েছেন যে মুজিবকে । সেই মুজিবকে না জানলে মানবতা জানা যায় না, নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা জানা যায় না ।মুজিবের জীবন সুধা-অমৃত সমান ।১০৩ তম জন্মদিনে তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধা হে বাঙালির কীর্তিমান রাখাল রাজা, হে বাঙালি জাতির পিতা। ।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

email: smh.mkt@brur.ac.bd 

মন্তব্য করুন


 

Link copied