আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ছাত্র সংসদ নির্বাচন: জটিল পরিস্থিতির শঙ্কা

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১২:৫১

Advertisement

নিউজ ডেস্ক :  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এ নিয়ে পরিকল্পনা করছে। তবে নির্বাচন ইস্যুতে অংশীজনদের মতামতে নানা বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে নিয়ন্ত্রণ হারায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। এই প্রেক্ষিতে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসগুলোতে কর্মসূচি পালন করছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। তাই নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য না হলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘দিন দিন ক্যাম্পাস নাজুক অবস্থার দিকে যাচ্ছে, হয়তো একটা সময় এসে যাবে ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে বসবে। আমরা তেমনটা চাই না। সংস্কারের নামে ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করে এক ধরনের গোঁড়ামি করছে। আমরা অবশ্যই সংস্কার চাই, একই সঙ্গে এটিও চাই ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে যতদ্রুত পারা যায় ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা  বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনটা কমিটি কাজ করছে। এই কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় হচ্ছে। তাদের যে মতামত বা সুপারিশ তা নিচ্ছি। এসবের ভিত্তিতে কমিটি যখন রিপোর্ট তৈরি করবে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’

শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সুষ্ঠুভাবে যেন পরিচালিত হয় সেই প্রত্যাশা তাদের। আগের মতো ছাত্র সংগঠনের কব্জায় থাকতে চান না। নিজেদের সমস্যার সমাধান, নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির মাধ্যমে করতে চান। এই নির্বাচন না হলে পরবর্তী সময় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে বাধ্য হয়ে অংশ নেওয়া লাগতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান শুভ বলেন, ‘নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। বিভিন্ন জন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখানে শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট একটি প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব অনুপস্থিত রয়েছে। যে যেভাবে পারছে বিপ্লবোত্তর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। একমাত্র ডাকসুই পারে, এই অনুপস্থিতির সংশয় দূর করতে। 

বাংলা বিভাগের রুবেল মিয়া বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। নিয়মতান্ত্রিক ডাকসুই পারে শিক্ষার্থীদের সকল অধিকার আদায়ের একমাত্র হাতিয়ার। শুধু অধিকার আদায় নয়, নেতৃত্ব বিকাশ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব গঠনে ডাকসুর বিকল্প নেই। যতদ্রুত সম্ভব, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা নতুবা দেরি করলে আমাদের ক্ষতি।’

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েক দফা ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে গঠনতন্ত্র সংস্কার এবং আওয়ামীপন্থিদের দায়িত্ব থেকে সরানোর কথা বলা হয়েছে। ছাত্রদলের এই দাবিকে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র দাবি করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপে পাল্টপাল্টি বক্তব্য এসেছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী তারাও শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি পালনে এগিয়ে আসছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন  বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা মত দেখা দিচ্ছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। গত ১৫ বছর ধরে যারা গোপন রাজনীতি করছেন, তারা এসেই ছাত্রদলকে নিয়ে মিমস বানাচ্ছে। তারই ছাত্রদলের নামে বেশি প্রপাগান্ডা করছে যারা গোপন রাজনীতি করেছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা তার জবাব দিচ্ছেন। আমরা কারও বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছি না। তারা বরং গোপন আইডি দিয়ে, বট আইডি দিয়ে প্রপাগান্ডা করছে। আমরা প্রকাশ্যে আন্দোলন করেছি। তার বিপরীতে শিবির গোপনে রাজনীতি করছে। এটা প্রমাণিত। আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করছি।’

ক্যাম্পাস পরিস্থিতি যেন ঠিক থাকে তা নিয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শিবির ছাড়া ২৮টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। যারা প্রকাশ্যে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে আবারও বসার পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে সেখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি।

আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ডাকসুকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। আগামী সভায় নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া দরকার। এই নির্বাচন নিয়ে যদি কোনো কোনো সংগঠন নিজেদের স্বার্থে জটিলতা তৈরি করে- সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। সুস্থ রাজনীতির জন্য ডাকসুর কোনো বিকল্প নেই। ক্যাম্পাসগুলোতে হল দখল কিংবা আধিপত্য বিস্তারের যে রাজনীতি তা ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে বন্ধ হবে। যদি নির্বাচন না হয় তাহলে যা ছাত্রলীগ করেছে তার ধারাবাহিকতা ফিরে আসবে। অর্থাৎ আগামীতে যারা জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করবে তাদের ছাত্র সংগঠন একই কাজ করবে। এখনই নির্বাচন করার উপযুক্ত সময়।’

যা বলছেন ছাত্র সংগঠনের ঢাবি শাখার নেতারা
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘এখনো ছাত্রলীগের অনেকেই হলে রয়েছেন, এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আন্দোলনের আগে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিগত বছরে ছাত্রলীগের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে একটা স্ট্যাটাসের ওপর ভর করে, তারা বিগত সকল অপকর্মের দায় থেকে পার পেয়ে গেল, এখন কেউ যদি দোষী হয়, অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা। সবমিলিয়ে আমরা চাই, একটি পরিবেশ নিশ্চিত করে, ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে। 

ছাত্র শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে ফেব্রুয়ারির ভেতরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা অসম্ভব কিছুই না। আমরা চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কারসংক্রান্ত যেসব ইস্যু রয়েছে সেগুলো সমাধান করে যত দ্রুত পারা যায় ডাকসু নির্বাচন দিয়ে দেওয়া। 

ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মো. সানাউল্লাহ হক বলেন, ডাকসু নির্বাচন সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, তাই এটি বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাইকে নিয়ে একটি নির্বাচন দেওয়া হোক।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কার্যকর আলাপ-আলোচনা শুরু করে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনে ডাকসু নির্বাচন দিয়ে দেওয়া। 

সহানুভূতিশীল থাকার আহ্বান জাবি কর্তৃপক্ষের
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। এখানেও সংস্কারের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলছে ছাত্রদল। আর শিবিরসহ অন্যরা দ্রুতই নির্বাচন চায়। আগের ভূমিকার কারণে শিবিরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েও শর্ত দিচ্ছে ছাত্রদলসহ অন্যরা। ফলে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসন নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল অংশীজনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে সকলকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’ 

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ছাত্রদল সব সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। তবে তার আগে কিছু মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন। সেসব বিষয়ে সংস্কার করে নির্বাচনি তফসিল দিতে হবে।’ 

ছাত্রশিবিরকে নির্বাচনে চান না জানিয়ে ছাত্রদল আহ্বায়ক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ২২টি সংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওই তালিকায় জাকসুও ছিল। যেহেতু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাকসুর সিদ্ধান্ত জাকসুকেই (নির্বাচিতরা) নিতে হয়। তাই এই নির্বাচনে শিবির অংশগ্রহণ করুক, আমরা চাই না। জাকসু নির্বাচন হলে নির্বাচিত সদস্যরা শিবিরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে শিবিরের উপস্থিতি চাই না।’

ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশের) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, গঠনতন্ত্রের সংস্কার করে দ্রুত তফসিল ঘোষণা করে তা কার্যকর করা হোক।

ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘গত তিন দশক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে আমেজ তৈরি হয়েছে, তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন করে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। কোনো টালবাহানায় যেন জাকসু নির্বাচনকে পিছিয়ে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা কামনা করছি।’

তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের ভিপি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বড় অংশীজন। এখানে কারও হস্তক্ষেপে জাকসু বিলম্বিত হোক, তা চাই না। জাকসু আমাদের প্রাণের দাবি।’

মন্তব্য করুন


Link copied