আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

রংপুর-৫

এককভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত,বিএনপির প্রত্যাশী একাধিক

শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, দুপুর ০৩:৪১

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৫ আসন। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময় এই আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। বিএনপি থেকে মাত্র একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এক সময়ের জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসন কৌশলে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। শেষ চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যখন বিরোধীদলের আন্দোলন শুরু হয় তখন জামায়াত-শিবিরের তৎপরতায় মিঠাপুকুর হয়ে উঠেছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থীরাই জয়লাভ করেন। সর্বশেষ ২০২১-২২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত সাত ইউনিয়নে জয়লাভ করে।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন এবং বাকি সাতটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও শপথ নিতে গিয়ে গ্রেফতার হন জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। পরে প্যারোলে মুক্ত হয়ে শপথ নিলেও শেষ পর্যন্ত চেয়ারে বসা সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রংপুর জেলা আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী শাহ সোলায়মান আলম ফকির। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে শেষ মুহূর্তে এসে মনোনয়ন ফিরে পান। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের আশিকুর রহমানের কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন।

সেবার মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৬ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহ্ মো. সোলায়মান আলম ফকির পেয়েছিলেন ৬৪ হাজার ১৪৭ ভোট এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৫১৬ ভোট। যদিও পরে ওই ভোটগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও শপথ নিতে গিয়ে গ্রেফতার হন জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। পরে প্যারোলে মুক্ত হয়ে শপথ নিলেও শেষ পর্যন্ত চেয়ারে বসা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

সেবার শরিক দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়ায় উন্মুক্ত লড়াইয়ে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতের তৎপরতা সামনে চলে আসে। এতদিন বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করে এলেও এবার এককভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।

তবে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী শাহ সোলায়মান আলম ফকির রাজনীতিতে আবার ফিরে আসবেন কি না তা নিশ্চিত না হলেও এরই মধ্যে রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ডা. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাজেদুর রহমান রানা, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকার, মিঠাপুকুর উপজেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি প্রভাষক একেএম রুহুল্লাহ জুয়েলসহ একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক গোলজার হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ডা. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাজেদুর রহমান রানা, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকার, মিঠাপুকুর উপজেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি প্রভাষক একেএম রুহুল্লাহ জুয়েলসহ একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (অবিভক্ত আসন) আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল, ১৯৮৬ সালে (সীমানা পরিবর্তন) আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির হারিজ উদ্দিন সরকার, ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (উপ-নির্বাচনে মিজানুর রহমান চৌধুরী), ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান), ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির শাহ সোলায়মান আলম ফকির, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশিকুর রহমানের ছেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাশেক রহমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, আগে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছি। তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা প্রশাসনকে দিয়ে আমার মনোনয়ন বাতিল করেছে। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। জেলে বন্দি থাকতে হয়েছে।

গোলাম রব্বানী বলেন, এসব কারণে এ এলাকার ভোটারসহ সাধারণ মানুষ তাদের কর্মকাণ্ডে ভীষণ ক্ষুব্ধ। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এবার মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে যাচ্ছে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে আর মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে এ আসনে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলার সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, এই আসন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ও তার দোসরদের দখলে ছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অন্যায়ভাবে তারা এতদিন ক্ষমতা দখল করে ছিল। বিএনপির পক্ষে এখানে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আমি এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিলে জনগণের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গোলজার হোসেন অসুস্থ থাকায় নির্বাচন নিয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের ভোটার সামসুল ইসলাম বলেন, এ আসনে জামায়াতের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের মাঝেও তারা সাংগঠনিকভাবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। বিগত ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিরও ভোট রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের কর্মী-সমর্থকরা কোন দিকে যাবেন সেটা দেখার বিষয়।

সামসুল আলম আরও বলেন, এতদিন এ আসনের বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত জোটগতভাবে অংশ নিয়েছে। এবার যদি আলাদাভাবে নির্বাচন করে তাহলে তাদের ভোটও আলাদা হয়ে যাবে।

রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৩৫। এরমধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৯৮৪, পুরুষ ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিল চারজন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪১। গতবারের তুলনায় ভোট বেড়েছে ২৭ হাজার ৭০৬টি।

মন্তব্য করুন


Link copied