আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

আর হাসির পাত্র হতে চাই না- রাঙ্গা

মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪, সকাল ০৯:২০

Advertisement

ডেস্ক: জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আগামী ৯ মার্চ দলের কাউন্সিল অধিবেশন ডেকেছেন। সেই কাউন্সিলে থাকছেন না রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ রংপুর বিভাগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অবস্থান পাল্টালেন; সেইসঙ্গে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন রাঙ্গা।

সোমবার (০৪ মার্চ) রাতে এসব কথা জানিয়েছেন রাঙ্গা নিজেই। আগামী ৯ মার্চ জাপার নামে রওশন এরশাদ যে কাউন্সিল অধিবেশন ডেকেছেন, তাতে থাকছি না উল্লেখ করে রাঙ্গা বলেন, ‘অধিবেশনে যোগ দেবো না। চেয়ারম্যান ও দলের বাইরে গিয়ে ডাকা এই কাউন্সিল অবৈধ ও গঠনতন্ত্রবিরোধী। আমি তামাশার পাত্র হতে চাই না। রাজনীতি করলে মূল জাতীয় পার্টির করবো। অর্থাৎ যেখানে লাঙ্গল আছে, সেই দলই করবো। দলের বাইরে গিয়ে অন্য কারও সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই না।’

এখনও রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে তার ঘনিষ্ঠজনরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন জানিয়ে রাঙ্গা বলেন, ‘রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টি আর করতে চাই না। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরসহ পুরো বিভাগের আট জেলা থেকে দলের শীর্ষ নেতা, প্রেসিডিয়ামে সদস্য ওই কাউন্সিল অধিবেশনে অংশ নেবে না। কারণ রংপুরের মানুষ দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি এখনও সহানুভূতিশীল। এখানে রওশনের পক্ষে নেতাকর্মী নেই। এমনকি তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ভেঙে আলাদা দল হলেও তাতে এই অঞ্চলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও মানুষের সমর্থন পাবে না। একেবারেই না।’

দীর্ঘদিন রওশন এরশাদের সঙ্গে রাজনীতি ও তার পন্থি নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মূল পরিচয় দলের প্রতীক লাঙ্গল। অথচ সেটি পার্টির চেয়ারম্যানের হাতে। আমি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের মহাসচিব হয়েছিলাম। দলের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে সবকিছু জানি। এবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ দলের নেতারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করেছেন। ১১ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে দলের প্রতীক লাঙ্গল ফিরে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই রওশন এরশাদের। তিনি আবার ডেকেছেন কাউন্সিল অধিবেশন। কাজেই তার কাউন্সিলে যোগ দিয়ে নিজেকে আর বিতর্কিত করতে চাই না। অনেক হয়েছে, আর হাসির পাত্র হতে চাই না।’

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ‘রওশন এরশাদপন্থিরা দল ভারীর চেষ্টা করছেন। এগুলো নাটক। রংপুর বিভাগের কোনও নেতা তাদের কাউন্সিল অধিবেশনে যাবে না। এখানে সব নেতাকর্মী ও কাউন্সিল দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে আছেন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাপার নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামের জরুরি সভা ছিল ২ মার্চ। অন্যদিকে ৯ মার্চ জাপার নামে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশন ডেকেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তাদের পৃথক কর্মসূচি ঘিরে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে (জাপা) উত্তেজনা দেখা দেয়। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নেতৃত্ব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কোনও আপস না হলে জাপায় আরেক দফা ভাঙন হতে পারে।

জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কাউন্সিল অধিবেশন সামনে রেখে রওশন এরশাদ দলের সাবেক, নিষ্ক্রিয় এবং বাদ পড়া নেতাদের সংগঠিত করছেন। অন্যদিকে জি এম কাদের দলে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে কাউকে পদোন্নতি, আবার অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের কাউকে স্বপদে ফিরিয়ে আনছেন। ইতোমধ্যে দলের তিন জন নেতার অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা হলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেকার আহসান হাসান ও যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম সরকার। পাশাপাশি দুই সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১ আসন) ও শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে (বগুড়া-২) প্রেসিডিয়ামের সদস্য করেন জি এম কাদের। এর আগে তারা জাপার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এখন এই দুজনসহ জাপার প্রেসিডিয়ামে সদস্য হলেন ৩৭ জন।

দলের ৪১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামে বর্তমানে আরও চারটি পদ শূন্য আছে। সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের অন্যতম দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন, দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ও শফিকুল ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চার জনই গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। অন্যদিকে ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরে মনোনয়ন না দেওয়ায় রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। এর রেশে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন রাঙ্গাও।

মনোনয়ন পেতে জি এম কাদেরের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করলেও সাড়া পাননি। এ অবস্থায় রওশন ও জি এম কাদেরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করলেও কোনও সমঝোতা হয়নি। শেষমেশ রওশন ও সাদ এরশাদ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সংসদ নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। তবে রাঙ্গা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। এই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবলুর কাছে পরাজিত হন রাঙ্গা। 

আসাদুজ্জামান ৭৩ হাজার ৯২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা পান ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ লাঙ্গল প্রতীকে ১০ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে রংপুরে আসলেই নিজ নির্বাচনি এলাকা গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরের বাসায় অবস্থান করেন রাঙ্গা। রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়ার বাসভবনে যান না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গার একান্ত এক সহযোগী বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকার বাসায় থাকবেন রাঙ্গা। এলাকার নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আবারও মূল দলে ফিরতে চান।’

জেলা জাপার শীর্ষ দুই নেতা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের নেতারা প্রায়ই অবস্থান পাল্টাচ্ছেন। একবার রওশনের দিকে যান তো কয়েকদিন পর জি এম কাদের পক্ষে ফিরছেন। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া এবং আর্থিক অসহযোগিতার অভিযোগে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ পাওয়ার পর ৩০ জনের মতো নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা রয়েছেন। এই নেতারাসহ দলের কেন্দ্রীয় থেকে জেলা পর্যায়ের অনেক পুরোনো, নিষ্ক্রিয় এবং বিভিন্ন সময়ে বাদ পড়া নেতাদের সংগঠিত করে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রওশনপন্থিরা।

রওশনপন্থিদের নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ৯ মার্চ জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন হবে। রওশন এরশাদ ইতোমধ্যে দুজনকে (চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক) দলের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়েছেন। তারা শুধু সংসদে নেতৃত্ব দেবেন, দল চালাবেন রওশন এরশাদ।’ খবর-বাংলাট্রিবিউন

মন্তব্য করুন


Link copied