আর্কাইভ  শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫ ● ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা

সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সারা দেশ উত্তাল ছিল ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে

‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
‘পানি খাওয়াতে মিরপুর থেকে এসে ফার্মগেটে হিটস্ট্রোক করেন আঙ্কেল’

সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
সড়ক-রেলপথ অবরোধ, শাহবাগে কর্মসূচি

উত্তরবঙ্গের পথে ঈদযাত্রায় ‘কাঁটা’ ঝাঐল ওভারব্রিজ এলাকা

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩, বিকাল ০৭:৩৩

Advertisement

ডেস্ক: ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করার পর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার যানবাহন নির্মাণাধীন মহাসড়কের চার লেন দিয়ে গন্তব্যে ছুটবে। কিন্তু মাত্র সাত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর কামারখন্দের ঝাঐল ওভারব্রিজের কাছে তাদের গতি শ্লথ হয়ে পড়তে পারে। কারণ, চার লেন ধরে আসা যানবাহন এই ব্রিজের পূর্বপাশে এসে দুই লেন সড়কে পড়বে। এখানে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ এখনও শুরুই হয়নি।

চার লেনের যানবাহন দুই লেনে ঢোকার পর সংখ্যাধিক্যের কারণে গাড়ির গতি কমে যাবে। পাশাপাশি একই সময়ে ঢাকার দিকেও যানবাহনের চাপ থাকবে। এ অবস্থায় বৃষ্টি বা দুর্ঘটনার মত কোনো ঘটনা ঘটলে তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে জানাচ্ছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নির্মাণাধীন এ মহাসড়কে আরও ১৩টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ বিভাগ।

নির্মাণকাজ চলার কারণে ওইসব স্থানে সড়কের একটি লেন চালু থাকবে। এ পরিস্থিতিতে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সাসেক-২ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসন ও সওজ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করছেন। সম্প্রতি সরজমিন মহাসড়ক ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে। চার লেনে উন্নীত হচ্ছে মূল মহাসড়ক। এ ছাড়া বেশকিছু সেতু, কালভার্ট, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ এ মহাসড়কটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যা দুদফা সময় বাড়িয়ে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ অংশে ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। হাটিকুমরুল মোড়ে গিয়ে এ সড়কটি তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ামুখী মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের অংশের চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার অংশেও চলছে সংস্কার কাজ। এ সড়ক দিয়ে উত্তরের নয় জেলার যানবাহনগুলো চলাচল করে থাকে। তাই ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের চাপও থাকে বেশি। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া এবং পাবনার নগরবাড়ি মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। তবে এসব মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকায় তেমন কোনো সমস্যা হয় না। 

সাসেক-২ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার আবু সাদ জানান, ঝাঐল ওভারব্রিজ এলাকায় একটি ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। যার নীচ দিয়ে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের দুপাশে নির্মাণ হচ্ছে দুটি আন্ডারপাস। এর একটি দিয়ে চলবে আঞ্চলিক সড়কের যানবাহন। অপরটি পাশের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলে ব্যবহৃত হবে। এসব স্থাপনা তৈরিতে বার বার নকশা পরিবর্তন করার প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এ অংশে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর পর থেকে উত্তরের পথে চার লেনে যানবাহন চলাচল করলেও এখান থেকেই দুই লেনের ব্যবহার শুরু করতে হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ (আবাসিক) প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ভূইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পরে মহাসড়কের ঝাঐল ওভারব্রিজ পয়েন্টটি তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার কাজ চলার কারণে এখানে লেন বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে চলাচল করা ছোট ছোট যানবাহন যাতে সহজে এই স্থান অতিক্রম করতে পারে সেজন্য একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যা দুই লেনের যানজট ও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সহায়তা করবে। ২০ রোজার মধ্যেই এসব কাজ শেষ করা হবে।

বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী সরকার পরিবহন বাসের চালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “চান্দাইকোনা থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত মহাসড়কে বর্তমানে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এ মহাসড়কের চান্দাইকোনা, সাহেবগঞ্জ, বেলতোলাসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তায় হাঁটু সমান গ্যাপ আছে এবং রাস্তা তুলনামূলক অনেক সরু। এ অবস্থায় বাস চালানো খুবই কষ্টকর।”

সিরাজগঞ্জ সদরের কড্ডা মোড়ের দূরপাল্লা বাসের বুকিং মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত বছর পুলিশ, পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক নেতারা একসঙ্গে মহাসড়কে থাকায় ঝামেলা অনেক কম হয়েছিল। এবারও তাই করতে হবে। পাশাপাশি ঈদযাত্রা শুরু হলে যানজট এড়াতে লোকাল রুটের যানবাহনগুলোকে মহাসড়কের পাশে দাঁড়াতে না দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাহিদার বিবেচনায় মহাসড়কের কড্ডাসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের পাশে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য অস্থায়ী টয়লেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশের কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হেগো-মীর আখতারের জয়েন্ট ভেঞ্চার।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. এখলাস উদ্দিন বলেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে (১৮ রোজা) মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে। এরপর যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে মহাসড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ থাকবে। বৃষ্টিসহ কোনো কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি মেরামতের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি টিম প্রস্তুত থাকবে।

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক সালেকুজ্জামান জানান, ঈদযাত্রা শুরু হলে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ পার্শ্ব রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের কড়া নজরদারি রাখা হবে। কোনো যানবাহনকে মহাসড়কের উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হবে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, ঈদযাত্রায় মহাসড়ক কোথাও চার লেনে গিয়ে দুই লেনে, আবার কোথাও দুই লেনে গিয়ে চার লেনে যুক্ত হয়েছে। ঝামেলা এড়াতে এসব জায়গাগুলোতে পুলিশ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। ২৫ রমজান থেকে পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান করবে। যানজট নিরসন ও মহাসড়কের চাপ কমাতে প্রয়োজনে কিছু পার্শ্বরাস্তা (আঞ্চলিক সড়ক) মহাসড়কের যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সওজ বিভাগ, সাসেক প্রকল্পের কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সভা করা হয়েছে। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনের জন্য একটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হবে। পুলিশকে সহায়তা করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও মহাসড়কে থাকবেন।

মন্তব্য করুন


Link copied