স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটিতে রেলের অধিগ্রহণ করা জমির নায্যমূল্যের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার(২১ আগষ্ট) দুপুরে চিলাহাটি রেল স্টেশনের অদূরে বসুনিয়া পাড়ায় রেলের অধিগ্রহণ করা জমিতে ওই মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্ষতিগ্রস্তরা।
সংবাদ সম্মেলনে জমি মালিকরা বলেন, চিলাহাটি স্টেশনের মান উন্নয়ন ও চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি সংযোগ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই জমির বর্তমান বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে জমির মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমান বাজার দর বেশি হওয়ায় অধিগ্রহনের টাকা দিয়ে অন্যত্র জমি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জমি হারিয়ে অনেককে ভূমিহীনে পরিণ হতে হবে। তাই তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
বসুনিয়া পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক মো. ময়নুল হক (৫৫) বলেন, আমার মাত্র ছয় শতক জমিই সম্বল। ওই জমি রেল অধিগ্রহন করেছে। এখন চার হাজার টাকা দরে শতক দিবার চায়, বাজারত বিক্রি করিলে দাম হবে প্রতিশক আড়াই লাখ টাকা করে। ওই টাকা দিয়া কি জমি পাওয়া যাইবে? এখন জমি এমনি দিমো, হামরা গরিব মানুষ, ফকির হমো, তাও চার হাজার টাকা নিমো না।
জমি মালিক আরাফাত উজ জামান বলেন, চিলাহাটি রেল স্টেশন এবং পোর্টের উন্নয়ন কাজে জমি দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। চার বছরেরও বেশি সময় আগে রেল আমাদের জমিতে মাটি ভরাট করেছে। অধিগ্রহনের আগে আমরা জমি দিয়েছি। সেগুলো ছিল তিন ফসলি জমি। এখন রেল যে দর নির্ধারণ করেছে তা মেনে নেয়ার মতো না। তিনি বলেন, আমাদের ১১ শতক একটি পুকুরের সাড়ে চার শতক এবং আবাদী ৯৪ শতক জমি রেল অধিগ্রহন করেছে। পুকুরের জমির দর নির্ধারণ করেছে প্রতি শতক চার হাজার ৩৭৮ টাকা এবং আবাদী জমির দর নির্ধারণ করেছে প্রতি শতক ২৩ হাজার ৮৮২ টাকা। অথচ এখানে প্রতি শতক জমি বর্তমান বাজার মূল্যে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে। এখন গত চার বছরে আমাদের ফসলের যে তি হয়েছে ওই দামই আমরা পাচ্ছি না। আমরা জেলা প্রশাসক, রেলমন্ত্রীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই আমরা কৃষি বন্ধব বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্শণ করছি। তিনিই আমাদের কৃষকের কষ্টটা বুঝবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, এই এলাকায় যে জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে সবগুলোই তিন ফসলি জমি। ২০১৮ সাল থেকে রেল ওই জমিতে মাটি ভরাট করেছে। এলাকাবাসী রেলের উন্নয়নের স্বার্থে অধিগ্রহনের আগেই মাটি ভরাট করতে দিয়েছেন। তখন তারা বলেছিলেন জমি মালিকরা তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ওই জমির ধান বিক্রি করে জমি মালিকরা যে টাকা পেতেন ওই টাকাও তারা জমির ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, চিলাহাটি বাজারের প্রধান সড়কের পাশে দুই শতক জমির ওপরে একতলা ঘর যা আমার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমরা ছয় ভাই বোন ওই ঘরটি ভাড়া দিয়েছি। তাতে আমাদের সংসারের কিছু বাড়তি আয় হয়। ওই ঘরটিসহ জমি রেলওয়ে অধিগ্রহণ করেছে। বর্তামানে ওই জমির প্রতি শতকের বাজার মূল্য সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু অবকাঠামোসহ দুই শতক জমির ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৭ টাকা। যা মেনে নেয়ার মত না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেতকীবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম, ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক রাজিউল ইসলাম বসুনিয়া, মো. আসাদুজ্জামান বসুনিয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় রেলের উন্নয়ন কাজের জন্য সেখানে ১৭ জন জমি মালিকের দুই একর ৮৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়। যার অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি।