নিউজ ডেস্ক: জীবন চলার পথে একটা সময় মানবদেহে বয়সের ছাপ পড়ে। সে নিজেকে বুঝতে পারে তার বয়স হয়েছে। আর নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর নিয়মিত শরীরের যত্ন নেওয়া এবং শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা একান্তই জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ ৩০ বছর বয়স পার হলেই আপনার শরীর আপনার নিয়ন্ত্রণ থেকে একটু দূরে সরে যায়। অফিসের তাড়াহুড়া, সংসারের দায়িত্ব সামলে শরীরের যত্ন আর সেভাবে নেওয়া হয় না। বেশিরভাগ পুরুষই বলবেন যে, পরিবারের সবার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হলেও, নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তারা সচেতন নন। তা মোটেও ঠিক নয়।
কারণ পরিবারের কর্তা আপনি, তাই সবার আগে নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। আপনার ওপরই নির্ভর করে পুরো সংসারের দায়িত্ব, তাই নিজেকে সবসময় ফিট রাখা জরুরি। নির্দিষ্ট বয়সের পর শরীরের যত্ন নেওয়া উচিত।
আপনি হয়তো জানেনিই না যে, তলে তলে আপনার হার্টে রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিডের বাড়বাড়ন্ত হলো কিনা? কিন্তু নির্দিষ্ট বয়সের একটা সময়ে তা জানতে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত।
জীবনযাপনে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, সংসারের দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে মনের ওপর চাপ অনেকখানিই বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগে ভোগেন অনেক পুরুষই, কিন্তু মুখে প্রকাশ করেন না। দীর্ঘ সময় ধরে বাড়তে থাকা মানসিক চাপ একসময়ে গিয়ে বিষাদে রূপ নেয়। সে কারণে অবসাদ কিংবা যে কোনো জটিল মানসিক রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া খুবই জরুরি। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যান, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান। আর নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিটের জন্য হলেও ধ্যান ও যোগাসন অভ্যাস করার চেষ্টা করুন।
সেই সঙ্গে ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ধূমপান ছাড়ুন। ধূমপানের এ অভ্যাসে কেবল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে না, শরীরে একাধিক রোগের বাসা বাধে।
৩০ বছর বয়সের পর যে উপসর্গ দেখা দেবে, তা হচ্ছে—
দিনের পর দিন পেটের ওপরের দিকে হালকা ব্যথা অনুভব করছেন? বুকে চিনচিনে ব্যথা, রাতে শুলে দরদর করে ঘাম হয়, বাতানুকূল ঘরে থাকলেও ঘেমে যান— এমন সব উপসর্গ দেখা দিলে তা গ্যাস-অম্বলের জন্য হচ্ছে ভেবে অ্যান্টাসিড না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এমন সব লক্ষণ কিন্তু হৃদ্রোগেরও ইঙ্গিত হতে পারে।
এ বিষয়ে মেডিসিন চিকিৎসক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বলেন, বয়স ৩০ বছর পার হলেই পুরুষের শরীরের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। যে কোনো বয়সে একাধিক কারণে স্বাস্থ্যপরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। কোনো অসুখের আশঙ্কা যদি থাকে, তা জানতেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা। সেই সঙ্গে সুষম খাবার খাওয়া, নেশার মাত্রা কমানো এবং নিয়মিত শরীর চর্চাও জরুরি। বয়স বাড়লে মূত্রথলিতে নানা রোগ দেখা দেয় অনেকেরই। সে বিষয়েও সচেতন হওয়া থাকা জরুরি।
আপনার শরীরে যদি কোনো রোগ না-ও থাকে, তা হলেও বছরে একবার অন্তত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত। চিকিৎসক বলেন, আর ৪০ বছর বয়স পার করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। তাই বছরে একবার হলেও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষাটাও করিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ পুরুষের মধ্যে যে ক্যানসারগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যানসার অন্যতম। তাই সে পরীক্ষাও করিয়ে রাখা উচিত। আর নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট করানো জরুরি। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হার্টের পরীক্ষা, লিপিড প্রোফাইল, ইউরিক অ্যাসিড, থাইরয়েড টেস্ট ও নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের পরীক্ষাও করা উচিত।
এছাড়া অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা উচিত। যদি জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর সময় না পান, তবে প্রতিদিন সকালে হাঁটুন। তাতেও কাজ হবে। দিনে আধা ঘণ্টা সময় শরীরচর্চার জন্য দিতেই হবে। হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাঁতার, জগিং, সাইকেল চালানো খুবই জরুরি।